নগরীতে বাসাবাড়িতে থামছে না চুরি
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২৫, ১০:৩০:৫৪ অপরাহ্ন
থানায় অভিযোগ হচ্ছে, চুরিও চলছে
মুনশী ইকবাল:
ঈদের ছুটি নগরীতে বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। আগে মূল সড়ক থেকে ভেতরের দিকে বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটলেও ইদানীং মূল সড়কের আশপাশের বাসাবাড়িতেও চুরির খবর পাওয়া গেছে। যেসব বাড়িতে চুরি হয়েছে দেখা গেছে টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ছুটির কারণে অনেকেই শহরের বাসা তালা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গিয়েছেন। নিরিবিল এই সুযোগ চোর নিয়েছে। এসব চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ হচ্ছে, অভিযোগুলো চলমান বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। একদিকে অভিযোগ হচ্ছে অন্যদিকে চুরিও অব্যহত আছে।
চুরির ঘটনাগুলো খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যারা লম্বা ছুটিতে গ্রামে গিয়েছেন ফিরে এসে দেখেন জানালা ভেঙে চোর সবাকিছু নিয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার দাওয়াতে রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছেন পরদিন এসে দেখেন ঘরে চুরি হয়েছে। অনেকে আবার ঈদের ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনে রেখেছেন। চোর সেই টাকা টার্গেট করে এসে সুযোগ মতো চুরি করেছে।
চুরির পর ঘটনাগুলো পর্যক্ষেণ করে দেখা গেছে সাধারণত চোর বাসার পেছনের দিকে বস্তি বা ঘিঞ্জি বসবাসপূর্ণ এলাকা দিয়ে এসেছে এবং চুরি করে চলে গেছে। দাড়িয়াপাড়ার পাশর্^বর্তী কাজী ইলিয়াস, লামাবাজার নোয়াপাড়-ভাতালিয়া এলাকার পাশর্^বর্তী লালাদীঘির পার এবং কলাপাড়ার পাশর্^বর্তী পীর মহল্লা জনবহুল হওয়ায় চোর সহজে এসব এলাকা ব্যবহার করতে পারে। চুরি হওয়া বাসাবাড়ির আশপাশের লোকজন ও বিভিন্ন সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিও থেকে এই বিষয়গুলো ধারণা মিলেছে। এসব এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত দোকাপাটে লোকজনের আড্ডা থাকে আবার ভোর থেকে দিনান্তে কর্মজীবীদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। ফলে চোর সহজে তাদের সাথে মিলে কাজ সেরে ফেলে।
কোরবানি ঈদের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনটি বাসায় প্রায় একই ধরনের চুরির ঘটনা ঘটেছে। তিনটি বাসায়ই রাতের কোনো একসময় চোর গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে চুরি করেছে। এরমধ্যে নগরীর ২ নং ওয়ার্ডের দাড়িয়াপাড়ায় মেঘনা বি/ ১৫ নম্বর বাসায় বৃহস্পতিবার দিবগত রাতে রান্না ঘরের গ্রিল কেটে চুরি হয়েছে। এরআগে একই এলাকার মেঘনা বি/২২ নম্বরে এক চিকিৎসকের বাসায় সপ্তাহ খানের আগে চুরি হয়েছে। প্রায় একই সময় নগরীর ৭ নং ওয়ার্ডের বনকলাপাড়া এলাকার একটি বাসায় একই কায়দায় চুরির খবর পাওয়া গেছে। এরআগে গত রোজার ঈদের সময় নগরীর ১১ নং ওয়ার্ডের লামাবাজার নোয়াপাড়া এলাকায় এক সংবাদ কর্মীর বাসায় তালা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত এব্যাপারে মালামাল ফেরত বা কোনো চোর সনাক্ত হয়নি বলে জানান ঐ সংবাদ কর্মী।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নগরীর দাড়িয়াপাড়ার মেঘনা বি/১৫ নম্বর বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। চোর ঘরের গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। ঘরের লোকজন ঘুমে থাকায় কিছু টের পাননি বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। বাসার কেয়ারটেকার আজহার উদ্দিনের স্ত্রী জানান চুরির বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
এরআগে ১৩ থেকে ১৪ জুনের মধ্যে একই এলাকায় চিকিৎসক তানভির ইসলাম নাভিলের মেঘনা বি/ ২২ নম্বর বাসায় চুরি হয়। ডা. নাভিল জানান ঈদের পর তারা বাসা তালা দিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন দুইদিনের জন্য। ফিরে এসে দেখেন দোতলা বাসার নিচতলায় চুরি হয়েছে। চোর ল্যাপটপ, মোবাইল এবং নগদ তিন লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তারা ১৫ তারিখ থানায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পাশর্^বর্তী কোতোয়ালী থানার হজরত শাহজালাল তদন্ত কেন্দ্রে তদন্তাধীন।
এর সপ্তাহখানের আগে নগরীর বন কলাপাড়া এলাকায় এক সংবাদ কর্মীর আত্মীয়ের বাসায় চুরি হয়। ঘরের লোকজন ঈদের পর রাতে দাওয়াতে যান। পরদিন ফিরে এসে দেখেন চোর রান্নাঘরের গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে চুরি করেছে।
এ ব্যাপারে সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান চুরি হলে মামলা করতে হয় কিন্তু কেউ কেউ জিডি করেন। অনেকেই আবার চুরির বিষয় পুলিশকে জানাতে চান না। তবে জিডি হলেও নির্দিষ্ট অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তিনি চেষ্টা করেন মালামাল উদ্ধারের। বর্তমানে পুলিশ আগের চেয়ে আরও তৎপর ও আন্তরিক।
তিনি বলেন ঈদের সময় একসাথে অনেক বাসা খালি থাকায় এই সুযোগে চুরির ঘটনা ঘটে। সব এলাকায় পুলিশের পক্ষে একসাথে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে এবং উধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরেও তা দেওয়া হবে।