ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি চলছেই
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২৫, ৯:০৪:১১ অপরাহ্ন
আমেরিকা পিছু হটায় নেতানিয়াহুর হতাশা
স্টাফ রিপোর্টার : ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা চলছেই। ইরান ছুঁড়ছে দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র আর ইসরায়েল চোরাগুপ্তা হামলা অব্যাহত রেখেছে। তবে আমেরিকা পিছু হটায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মাঝে হতাশা কাজ করছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যগুলো জানায়।
ফের ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান :
শুক্রবার আবারো ইসরায়েল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি এ কথা জানিয়েছে। এ হামলায় ইসরায়েলে ১৭ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। দেশটির জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাগেন ডেভিড অ্যাডমের (এমডিএ) বরাত দিয়ে আল জাজিরা এ কথা জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় সাইরেন বেজে উঠেছে।
আল-জাজিরা জানায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক্স-এ (সাবেক টুইটার) জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে। দেশবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঢোকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইরান নতুন প্রজন্মের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এখনো ব্যবহার করেনি :
ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর ওপর পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ‘জায়নবাদীদের’ কড়া বার্তা দিলেও সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তেহরান এখনো তার নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে নামায়নি। খবর ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সির।
গত শুক্রবার (১৩ জুন) বিনা উসকানিতে ইরানের ওপর আগ্রাসী হামলা চালায় ইসরায়েল। পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকার ওপর চালানো এ হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক।
ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডের জবাবে ইরানের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা শুরু করে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্স গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’র অংশ হিসেবে ১৩ দফায় ইসরায়েল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের এ হামলাগুলোর বিশেষ ১০টি বৈশিষ্ট্য ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একপ্রকার অকার্যকর করে দিয়েছে।
‘হতাশ’ নেতানিয়াহু, দ্রুত মাঠে চান ট্রাম্পকে:
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ-এর কলাম লেখক ও বিশ্লেষক গিডিওন লেভি বলেছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারেন-এই ইঙ্গিতে নেতানিয়াহু ও তাঁর জোট গভীর হতাশায় পড়ছেন। কারণ নেতানিয়াহু চান, ট্রাম্প যেন যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধে যুক্ত হন।
গিডিওন লেভি আল-জাজিরাকে বলেন, এই বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ মানে অনন্তকাল। যদি ট্রাম্প সত্যিই দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে চান এবং এটা কোনো ছলচাতুরী না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।
লেভি আরও বলেন, ইসরায়েল যদি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস কিংবা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষমও হয়, তবু দীর্ঘ মেয়াদে ইসরায়েল নিজেদের আরও নিরাপদ ভাবতে পারবে না।
এই বিশ্লেষক বলেন, কিছুই সমাধান হবে না, কারণ ইরান তার সক্ষমতা পুনরায় অর্জন করতে পারবে। তিনি আরও যোগ করেন, ইসরায়েলের আরও অনেক নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে, যেগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে না-যেমন গাজা।
যা বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট :
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন নিঃশর্তভাবে বন্ধ করাই এ সংঘাত বন্ধের একমাত্র উপায়।
শুক্রবার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে পেজেশকিয়ান লিখেছেন, আমরা সব সময় শান্তি ও স্থিতিশীলতা চেয়েছি। চলমান চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের অবসানের একমাত্র পথ হলো শত্রুর আগ্রাসন নিঃশর্তভাবে বন্ধ করা এবং জায়নিস্ট সন্ত্রাসীদের দুঃসাহসিক তৎপরতা চিরতরে বন্ধের সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তা।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসন যদি থামানো না হয়, তাহলে ইরান আরও কঠোর জবাব দেবে। সেই জবাব এমন হবে, যা আগ্রাসনকারীকে এ দেশের ওপর হামলার জন্য অনুতপ্ত করবে।
ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তার দেশ আমেরিকার সাথে আলোচনায় বসবে না বলে আবারো জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএকে আরাঘচি জানান, আমেরিকানরা আলোচনা চায় এবং বেশ কয়েকবার বার্তা পাঠিয়েছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে “আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া” পর্যন্ত আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।
তেহরানে হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে :
তেহরানের একটি হাসপাতালে আবারও ইসরায়েলি বোমা হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধানের বিবৃতির বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এটা তৃতীয় হাসপাতাল, যা ইসরায়েলি হামলার শিকার হলো। হামলায় ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মম হামলার শিকার হয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সাত দিনের কাপুরুষোচিত আগ্রাসনে ইসরায়েল ছয়টির বেশি আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।