সিলেটে খোসপাঁচড়া’র বিস্তার
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জুন ২০২৫, ৮:০৩:৪৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: সিলেটে চর্মরোগ খোসপাঁচড়া বা স্ক্যাবিসের বিস্তার ইদানীং অনেকে বেড়েছে। দিন দিন ব্যাপক হারে তা ছড়িয়ে পড়ছে। বড়ো থেকে ছোটো সবাই এতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনিতে সারাবছরই এই রোগে আক্রান্তের মাত্রা থাকলেও গরমে তা অনেক বেড়ে যায়। সিলেটে বারবার বন্যা, ভ্যাপসা গরম ও তাপমাত্রার তারতথ্যের কারণে রোগটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এ থেকে পরিত্রাণে ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই সবচেয়ে অগ্রণী বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।
খোসপাঁচড়া ত্বকের খুবই সংক্রামক একটি সমস্যা। এ জন্য দায়ী সারকপটিস স্ক্যাবি নামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু। এ রোগ যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। এ রোগে চামড়ার ওপর প্রথমে রস ও পরে পুঁজযুক্ত বড়ো বড়ো ফুসকুড়ি হয়। শুরুতে আক্রান্ত স্থান অত্যন্ত চুলকায়। রাতে চুলকানি তীব্র হয়।
এটি ত্বকের অন্য সমস্যা যেমন অ্যালার্জি, ভাইরাস বা ছত্রাক সংক্রমণ থেকে আলাদা। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এই মাইট (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু) ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই জীবাণু মানুষের ত্বকের ঠিক নিচের অগভীর স্তরে বাস করে এবং দিনে দুই-তিনটা ডিম পাড়ে।
খোসপাঁচড়ার একটি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে প্রচণ্ড চুলকানি এবং ত্বকের ওপরে ফোসকা পড়া বা লাল হয়ে ফুলে যাওয়া। সাধারণত আঙুলের ফাঁকে এবং ত্বকের ভাঁজের মধ্যে হয়ে থাকে পাঁচড়া। এর চুলাকনি খুব মারাত্মক এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাতে বাড়ে।
সাধারণত একই বিছানায় শোয়া বা ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে থাকলে, একই কাপড়চোপড় বা তোয়ালে ব্যবহার করলে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলালেও এ রোগ ছড়াতে পারে। এ কারণে একই পরিবারে, স্কুলে, হোস্টেলে রোগটির প্রাদুর্ভাব অনেকের মধ্যে একসঙ্গে দেখা দেয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, খোসপাঁচড়া বা স্ক্যাবিস যাতে না হয় সেজন্য সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিয়মিত সঠিকভাবে গোসল করতে হবে। স্ক্যাবিস সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির বিছানা, তোয়ালে, পোশাক, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাবে না। কারো স্ক্যাবিস হলে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা রাখতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ, সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় সতকর্তা মেনে চলা এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাড়ির কেউ সংক্রমিত হলে সবাইকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত আড়াই মাসে শুধু সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে এই রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৩৫৫ জন। তাদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন। এর বাইরে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে স্ক্যাবিসসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্তদের ভিড় থাকছে। বিশেষ করে গত কয়েক মাস ধরে এ ধরনের রোগী বেশি আসছেন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, এপ্রিল মাসে হাসপাতালের বহির্বিভাগে শুধু স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ২৭১ জন। তারমধ্যে শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সের এক হাজার ১০২জন, ১০-২৪ বছরের এক হাজার ৫৪৯ জন, ২৫-৪৯ বছরের দুই হাজার ২ জন, ৫০-৮০ বছরের ৫৯৭ জন ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে ২১ জন।
মে মাসে এই হাসপাতালে স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন ছয় হাজার ৩৫০ জন। তারমধ্যে শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সের এক হাজার ৩৫৮ জন, ১০-২৪ বছরের এক হাজার ৮৭৭ জন, ২৫-৪৯ বছরের দুই হাজার ৩৬৪ জন, ৫০-৮০ বছরের ৭৩৩ জন ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে ১৮ জন।
সবশেষ চলতি মাসের ১৯ জুন পর্যন্ত স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৭৩৪ জন। এরমধ্যে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটির কারণে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। অর্থাৎ ৯ দিনে ওসমানী হাসপাতালে স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ হাজার ৭৩৪ জন। তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সের এক হাজার ১০৪ জন, ১০-২৪ বছরের ৯৭০ জন, ২৫-৪৯ বছরের এক হাজার ২৫৩ জন, ৫০-৮০ বছরের ৩৯২ জন ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে ১৫ জন।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী বলেন, স্ক্যাবিসে আক্রান্তের হার ব্যাপকহারে বেড়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে স্ক্যাবিসসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্তদের ভিড় থাকছে। বিশেষ করে গত কয়েক মাস ধরে এ ধরনের রোগী বেশি আসছেন। তিনি আরও বলেন, স্ক্যাবিস রোগটি সারা বছরই থাকে। তবে সাধারণত গরম বেশি হলে এই ছোঁয়াছে রোগটি বেড়ে যায়। এটি মূলত ব্যক্তির হাইজিনের (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) ওপর নির্ভর করে। এজন্য নিজেদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।