টেকনিক্যাল কমিটি প্রধানের এ কেমন দায়সারা কাজ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২৫, ৯:৪২:০০ অপরাহ্ন
তামিম মজিদ : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ২০২৪-২৫ স্নাতক ভর্তি কমিটির টেকনিক্যাল কমিটির এ কেমন দায়সারা কাজ। সম্প্রতি বি ইউনিটের মানবিক শাখার স্থলে ভর্তির জন্য ডাকা হয় বি ইউনিটের বিজ্ঞান শাখায় উর্ত্তীণ শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে এসে দেখেন, বিজ্ঞান নয় মানবিক বিভাগ থেকে উর্ত্তীণদের ভর্তি নেয়া হবে। আর তাতেই মাতায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৯৫ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। এমন দায়সারা কাজের অভিযোগের তীর টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. মাছুমের দিকে।
ভর্তি কমিটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলছেন, ভর্তি কমিটি তালিকা প্রস্তুত করে সভাপতি ও সদস্য সচিবের স্বাক্ষর হয়ে টেকনিক্যাল কমিটির কাছে যায়। ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনে এসএমএস ডেলিভারি করে টেকনিক্যাল কমিটি। সেই জায়গায় ভূল টেকনিক্যাল কমিটির হয়েছে, এখানে টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের ভূলের দায় নেবে না ভর্তি কমিটি। একটি সাব কমিটির ভূলে পুরো ভর্তি কমিটির দূর্নাম হতে পারে না। কমিটির সদস্যরা বলছেন, ভর্তি কমিটির দায়সারা কাজের বিষয়ে অনেকবার প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। তবুও প্রশাসন কমিটি প্রধানের বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তবে শিক্ষকরা বলছেন, বিশ^বিদ্যালয় ভর্তিতে ফলাফল প্রস্তুত, প্রকাশ এবং ওএমআর শীট চেক থেকে শুরু করে ভর্তি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে টেকনিক্যাল কমিটি। কিন্তু ভর্তির মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে এমন ভূল তালিকা কিভাবে প্রকাশ করা হলো? এমন দায়সারা লোকদের কেন ভর্তি কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সাব কমিটি টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান করা হলো ? এই ভূলের দায়ভার ভর্তি কমিটি নেবে না, এই দায়ভার টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানকে নিতে হবে। শিক্ষকরা বলছেন, ভর্তির তালিকা প্রকাশের এমন ভূলে শাবিপ্রবির মান ক্ষুন্ন হয়েছে। এর দায়ভার টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তদন্ত মোতাবেক টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে তৃতীয় ধাপে বি ইউনিটের বিজ্ঞান শাখার ৪০১ থেকে ৪৯৫তম মেধাক্রমধারীদের ২২শে জুন ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ভর্তি কমিটির দেওয়া তালিকা বি ইউনিটের মানবিক শাখার ৫৮১ থেকে ৬৫০তম মেধাক্রমধারীদের বদলে বি ইউনিটের বিজ্ঞান শাখার ৪০১ থেকে ৪৯৫তম মেধাক্রমধারীদের তালিকা প্রকাশ করে ভর্তির টেকনিক্যাল কমিটি। মোবাইল ফোনে এসএমএস ও ওয়েবসাইটে দেয়া এই তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীরাও ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নেন। তবে হঠাৎ করেই ভর্তি কার্যক্রমের একদিন আগে গত শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, ভুলবশত এই তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছিল। নতুন তালিকা অনুযায়ী বি ইউনিটের মানবিক শাখার ৫৮১ থেকে ৬৫০তম মেধাক্রমধারীদের ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়।
কিন্তু আগের দিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল ফোনে এসএমএস ও ওয়েবসাইটে টেকনিক্যাল কমিটি এই তথ্য প্রকাশ করায় পূর্বে বি ইউনিটের বিজ্ঞান শাখার যাদেরকে ডাকা হয়েছে এবং পরবর্তীতে বি ইউনিটের মানবিক শাখার যাদেরকে ডাকা হয়েছে, তারা কেউই নতুন বার্তা পাননি। ফলে পূর্বে বি ইউনিটের বিজ্ঞান শাখার ৪০১ থেকে ৪৯৫তম মেধাক্রমধারী ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীরা গত শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্যাম্পাসে আসেন। এসেই এই নোটিশ দেখে হতবাক হয়ে যান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এতেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ৯৫ ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। হতাশা নিয়েই ক্যাম্পাস ছেড়ে যান এসব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এরপরই বিতর্ক উঠে ভর্তির টেকনিক্যাল কমিটির দায়িত্ব নিয়ে।
কমিটির প্রধান হিসেবে ভূলের দায়ভার আপনার উপর বর্তায় কি না জানতে চাইলে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. মাছুম জালালাবাদকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। যা বলার ভর্তি কমিটি বলবে। এই ভূল কিভাবে হলো জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করবো না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাবিপ্রবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম জালালাবাদকে বলেন, ভূলটি মূলত টেকনিক্যাল কমিটি করেছে। যেকোনো ভূল হলে সংশোধন করার সুযোগ আছে, এখানেও সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের অংশীজনের যেকোনো পরামর্শ বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন সাদরে গ্রহণ করবে। সকলের পরামর্শে সিলেটবাসীর গর্বের এই প্রতিষ্ঠান চলবে।