এনসিসি থেকে সরলো ঐকমত্য কমিশন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০২৫, ১১:৩০:০০ অপরাহ্ন
* রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি * প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে ঐকমত্যের সম্ভাবনা *
জালালাবাদ রিপোর্ট : ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের গতকাল পঞ্চম দিনের সংলাপেও রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। তবে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে ঐকমত্য তৈরীর সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে কমিশন। নতুন এই কমিটির কাঠামোতেও পরিবর্তন আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি থাকার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, নতুন প্রস্তাবিত কমিটিতে তারা থাকবেন না। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের স্পিকার এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিটি শুধু সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অ্যাটর্নি জেনারেল ও তিন বাহিনীর প্রধানের নিয়োগ এই কমিটির অন্তর্ভুক্ত হবে না। আলী রিয়াজ বলেন, এই কমিটি হবে সাত সদস্যবিশিষ্ট, যেখানে সভাপতি থাকবেন নিম্নকক্ষের স্পিকার।
প্রস্তাবিত কমিটিতে থাকবেন- প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার (নিম্নকক্ষ), স্পিকার (উচ্চকক্ষ), বিরোধীদলীয় নেতা, প্রধান বিরোধী দল ছাড়া অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর একজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি (আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন), প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। সভাপতিত্ব করবেন নিম্নকক্ষের স্পিকার।
বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অধ্যাপক আলী রিয়াজ এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন।
এদিকে, দ্বিতীয় দফায় ষষ্ঠ দিনের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক হয়েছে গতকাল। মধ্যাহ্নবিরতির আগপর্যন্ত বৈঠকে রাষ্ট্রের মূলনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে ঐকমত্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সাম্য, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা-এ চারটি বিষয় সন্নিবেশিত করা হয়। এটাতে কমিউনিস্ট পার্টি ও কয়েকটি বাম দল ছাড়া আর সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে। পঞ্চম সংশোধনী যেটি আছে, তাঁরা বলেছেন সেটা থাকবে। পঞ্চদশ সংশোধনী যেটা আওয়ামী লীগ করেছিল, সেটা বাতিল হয়ে যাবে। এর সঙ্গে নতুন উল্লিখিত শব্দগুলো সংযোজিত হবে। এ বিষয়ে অধিকাংশই একমত।
কিসে একমত ও একমত নয় বিএনপি :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ১০ বছরের মেয়াদে বিএনপি একমত।তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এই প্রস্তাবে একমত হয়েছে বিএনপি। তবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) গঠন গঠনের সঙ্গে দলটি একমত নয়। এটি হলে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে খর্ব করার একটা সুযোগ তৈরি হয়। তাই এধরনের কিছু করা হলে আমরা সেই প্রস্তাবটি মেনে নিতে পারব না।
তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনের সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলেই হবে। নতুন করে বডি তৈরি করার দরকার নেই। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা না কমিয়ে কমিশনকে প্রভাবমুক্ত রাখাই হবে কার্যকর সংস্কার।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করে সংবিধান সংস্কার কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
যা বলল জামায়াত :
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নাম ও কাঠামো পরিবর্তনের যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দিয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একমত পোষণ করেছে। দলটির নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
জামায়াতের এই নায়েবে আমীর বলেন, তাঁরা লিখিতভাবে কমিশনে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে প্রস্তাবিত এনসিসিতে না রাখার কথা বলেছিলেন। ঐকমত্য কমিশন সেটার (এনসিসি) নাম ও কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব (সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি) দিয়েছে। আলোচনায় একটি দল ছাড়া সবাই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। জামায়াতে ইসলামীও এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে ডা: তাহের বলেন, তিনটি দল ছাড়া সবাই এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন-এ বিষয়ে একমত হয়েছে। বিষয়টি পরপর দুই মেয়াদের নয়, সর্বোচ্চ ১০ বছর। তবে কোনো কারণে মেয়াদ পূর্তির আগেই সংসদ ভেঙে গেলে এটি তিন মেয়াদও হতে পারে।
তাহের জানান, গতকালের বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সাম্য, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা-এ চারটি বিষয় সন্নিবেশিত করা হয়। এটাতে কমিউনিস্ট পার্টি ও কয়েকটি বাম দল ছাড়া আর সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে। পঞ্চম সংশোধনী যেটি আছে, তাঁরা বলেছেন সেটা থাকবে। পঞ্চদশ সংশোধনী যেটা আওয়ামী লীগ করেছিল, সেটা বাতিল হয়ে যাবে। এর সঙ্গে নতুন উল্লিখিত শব্দগুলো সংযোজিত হবে। এ বিষয়ে অধিকাংশই একমত।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। এ দেশের জনগণের সেন্টিমেন্ট হচ্ছে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, আস্থা, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এগুলো সংবিধানে রাখার পক্ষে তাঁরা। সে অনুযায়ীই তাঁরা তাদের মত দিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এটি সংযোজন করা অপরিহার্য।