কোয়ারি খোলার দাবিতে আন্দোলনের ১ম দিনে লোড-আনলোড পয়েন্টে কর্মবিরতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০২৫, ৯:৪৪:৩২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে অবশেষে লাগাতার কঠোর আন্দোলনে নেমেছেন সিলেটের মালিক ও শ্রমিকরা। শনিবার সিলেটের লোড-আনলোড পয়েন্টে কর্মবিরতির মধ্য দিয়ে ঘোষিত তিন ধাপের আন্দোলন কর্মসূচির প্রথম ধাপ শুরু হয়েছে শনিবার (২৮ জুন)।
প্রথম ধাপের আন্দোলনের ১ম দিনে শনিবার দিনভর সিলেটের সব পাথর কোয়ারি ও লোড-আনলোড পয়েন্টে মালিক শ্রমিকরা মিলে কর্মবিরতি পালন করেন। ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি সোমবার ভোর ৬টায় শেষ হবে। এরপর থেকে শুরু হবে সিলেট জেলায় পণ্যপরিবহনে কর্মবিরতি। এতে জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহন বন্ধ রাখা হবে।
এদিকে সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে তাদের ডাকা লোড-আনলোড পয়েন্টের ৪৮ ঘন্টার কর্মবিরতির প্রথম দিন শান্তিপূর্ণ ভাবে অতিবাহিত হয়েছে।
শনিবার ভোর ৬টা থেকে ভোলাগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, জাফলং, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর এলাকার লোড-আনলোড পয়েন্ট এলাকায় পরিবহন মালিক-শ্রমিক, ব্যববসায়ী, বেলচা শ্রমিক, বালু শ্রমিক ও পাথর শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। ভোর থেকে কোন গাড়িতে লোড-আনলোড করেননি মালিক-শ্রমিকরা। সকালে জাফলং বল্লাঘাট পয়েন্টে মালিক-শ্রমিকরা জড়ো হয়ে এক সংক্ষিপ্ত পথসভা করেন।
জাফলং ট্রাক চালক আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইয়াসীন আলীর সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সম্বন্নয়ক ও ট্রাক, পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির মহাসচিব শাব্বীর আহমদ ফয়েজ, সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সহ সভাপতি নারায়ান পুরকায়স্থ ফনি, ট্রাক মালিক সমিতির সহ সভাপতি কয়ছর আলী জালালী, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মোঃ মনছুর আলম, জাফলং ট্রাক চালক আঞ্চলিক কমিটির নুরুল আমীন, গুচ্ছগ্রাম ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি স্বপন আহমদ, জাফলং পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য আজিজুর রহমান আজিজ, ভোলাগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় কর্মবিরতি পালনকালে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক আব্দুল জলিল, সদস্য সচিব মোঃ নাজির আহমদ স্বপন, যুগ্ম আহবায়ক শুকত আলী বাবুল, ক্রাশার মিল মালিক সাধার সম্পাদক আব্দুল হেকিম, পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিমুল ইসলাম আঙ্গুর, ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান, মামুন রশিদ, আব্দুস সামাদ, ইলিয়াস আলী, ক্রাশার মিল মালিক রফিকুল ইসলাম, বাবুল চেয়ারম্যান, আবু জাফর দুলন এবং ধোপগুল এলাকায় কর্মবিরতি পালনকালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ খান সাদেক, সিলেট সদর পাথর বালি ও ষ্টোন ক্রাশার মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ মন্তাজ আলী,সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল আলম সাদ্দাম, সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য জয়নুল হক, সিলেট সদর পন্যপরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মুহিবুর রহমান সোলেমান, মোঃ শানুর মিয়া, নাজিম উদ্দিন ইমরান মেম্বার, আব্দুল হক, সালুটিকর পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ দিলু মিয়া, এয়ারপোর্ট থানা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমদ, ব্যবসায়ী টি, ইউ রাজা, আব্দুল আহাদ, নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
জানা গেছে, সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবীতে গত ২৪ জুন সিলেট নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সমাবেশ থেকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। এতে সিলেটের বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়ে দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।
জানা গেছে, ২০২০ সালে পরিবেশবাদী সংগঠন বাপা, বেলা এবং অন্যান্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারি এলাকাগুলোকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে সরকার সেখানে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেয়। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় এক আদেশে দেশের অন্য এলাকাগুলোতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলেও সিলেটের পাঁচটি কোয়ারিতে তা এখনও বলবৎ রয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞায় সিলেট অঞ্চলে প্রত্যক্ষভাবে পাথরখাত নির্ভর প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি মানুষের জীবিকা এই খাতের সঙ্গে জড়িত থাকায় অঞ্চলজুড়ে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট।
সিলেট জেলা পাথর মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল দৈনিক জালালাবাদকে জানান, শ্রমিক ও মালিকরা এ দেশেরই নাগরিক এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু সরকারের অবহেলার কারণে তারা এই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচী চলবে।