ওসমানীগরে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুন ২০২৫, ৭:০০:২৩ অপরাহ্ন
ওসমানীনগর প্রতিনিধি:
ওসমানীনগরে হিসাবরক্ষণ অফিসে ব্যাপক ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ ছাড়া কোনো অবসরকালিন পেনশনের টাকা, উন্নয়নের টাকা এবং টিএ বিল ছাড় দেন না কর্মকর্তা অনিমেশ পাল।
দীর্ঘদিন ধরে চলমান এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রায় সাড়ে ৫শ শিক্ষক উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচীর ডাক দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও বিক্ষুদ্ধ শিক্ষক নেতাদের নিয়ে বসলে নিজের ভুল স্বীকার করে আর এরকম কোন কাজ করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। এরপর শিক্ষকরা তাদের মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে ফিরে আসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকগণ।
জানা যায়, গত রোববার বিকাল ৪টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অনিমেষ পালের দুর্নীতির বিরুদ্ধে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মানববন্ধন কর্মসূচীর ডাক দেন। মানববন্ধনে উপজেলার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৫শ শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও শিক্ষক নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসলে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শিক্ষকদের ভবিষ্যতে হয়রানী করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন বলে নিশ্চিত করেন শিক্ষক নেতারা।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের এককালিন পেনশন উত্তোলন, বিদ্যালয়ের স্লীপ বিল, সহকারি শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড নির্ধারণ, উৎসব ভাতা ও বকেয়া বেতনসহ টাইম স্কেল নির্ধারণে বিভিন্ন অংকের টাকা না দিলে হয়রানি করেন। এর প্রতিবাদে মানবন্ধনের ডাক দেওয়া হয়।
প্রথমপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিব আহমদ চৌধুরী বলেন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আমাদের শিক্ষকদের উচ্চ ধাপের বকেয়া বেতন উত্তোলনে নানা ধরণের হয়রানি করে থাকেন। এই হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে আমি নিরুপায় হয়ে তাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি। এই টাকা না দিলে নানান অজুহাত দেখিয়ে দিনের পর দিন তিনি শিক্ষকদের ফিরিয়ে দেন। গোয়ালাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ওয়েছ আহমদ চৌধুরী বলেন, আমার বদলিজনিত কারণে এলপিসি প্রেরণে টাকা না দেওয়ায় এলপিসি পাঠাতে তিন মাস বিলম্ব করেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। এতে আমি অনেক হয়রানির শিকার হয়েছি।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ওসমানীনগর শাখার সভাপতি ও ফকিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, আমাদের শিক্ষকগণ হিসাবরক্ষণ অফিসে গেলে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। আমরা হিসাবরক্ষণ অফিস ঘুষ ও দূর্নীতিমুক্ত চাই।
উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অনিমেষ পাল বলেন, একটি টিএ বিল প্রদান নিয়ে শিক্ষকদের সাথে ভুল বুঝাবুঝি হয়। শিক্ষকরা মানববন্ধন করতে গেলে পরে ইউএনও আমাদের নিয়ে বসলে বিষয়টির অবসান হয়। শিক্ষকদের অবসরে গেলে পেনশন তুলতে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় এটা আমার জানা নেই। ১৩ তম গ্রেড নির্ধারণের সময় আমাদের কথা বলে অন্য কেউ যদি শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয় এর দায় আমাদের নয়। স্লীপ ভাতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকরা ঘাপলা করে থাকেন। ইদানীং অনলাইনে আবেদনের সরকারি নির্দেশনা এসেছে। শিক্ষকরা অনলাইনে আবেদন করেননি তাই বিল পেতে সমস্যা হয়, এতে আমাদের কোন দায় নেই।
ওসমানীনগর উপজেলা সহকারি প্রাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হক সানি বলেন, আমি তো কোন ফাইল ডিলিং করিনা, যারা ফাইল ডিলিং করে তারা বলতে পারবে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মাঝে একটি বিল অনলাইনে আবেদন করা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হলে শিক্ষকরা মানববন্ধন করতে যান। বিষয়টি সমাধান হয়েছে, পরবর্তিতে তারা বিল পাবেন। পেনশননের টাকা উত্তোলনসহ অন্যান্য দুর্নীতির বিষয়টি আমার জানা নেই।