ওসমানী হাসপাতালের বারান্দায় ২ নারীর সন্তান প্রসব, ১ নবজাতকের মৃত্যু !
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০২৫, ১০:১৮:৫৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ডের বারান্দায় সন্তান প্রসব করেছেন দুই নারী। ৫ মাস বয়সে জন্ম নেয়া এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২ জুলাই) বেলা ২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাটিবহর গ্রামের সাহিন মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম (১৯) এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রামপাশা গ্রামের রতন চন্দ্র দাসের স্ত্রী সুপ্রিতা রানী দাসকে (২৫) স্বজনরা তাদেরকে ওসমানী হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। ওয়ার্ডে শয্যা সংকট থাকায় তাদের বারান্দায় বসিয়ে রাখা হয়। এর কিছুক্ষণ পর প্রসব বেদনা উঠলে চিকিৎসক ও নার্সদের সাড়া না পাওয়ায় সুমি বেগম বারান্দায় সন্তান প্রসব করেন। এর ১০ মিনিট পর সুপ্রিতা রানী দাসও বারান্দাতেই সন্তান প্রসব করেন। এ সময় সেখানে থাকা রোগীদের স্বজনরা তাদের পরণের কাপড় দিয়ে প্রসূতির আশপাশ ঘেরাও করে সহযোগিতা করেন। প্রসবের কিছুক্ষণ পর এক নারী চিকিৎসক এসে তাদের ওয়ার্ডের ভেতরে নিয়ে যান। পরে সুমি বেগমের নবজাতকটি মারা যায়। তবে মারা যাওয়া নবজাতক শিশুটির মাতৃগর্ভে থাকতে বয়স হয়েছিল মাত্র ৫ মাস।
সুমি বেগম বলেন, হাসপাতালে আসার পর আমাকে দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। তার বাবা আজাদ মিয়া এ ঘটনায় ওসমানী হাসপাতাল ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আজাদ মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঐদিন লেবার ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওসমানী হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে প্রাথমিক চেকআপের জন্য মাত্র ৩টি বেড রয়েছে। তখন সবকটি বেডই রোগীতে পূর্ণ ছিল। এমনকি ভেতরের সব বেড এবং ওপারেশন থিয়েটারে জরুরী রোগীতে ভরপুর ছিল। সেদিন এই ওয়ার্ডে আসা অধিকাংশ রোগীদের ইমার্জেন্সী ট্রিটমেন্ট দরকার ছিল। তাই তখন ঐ দুই নারীসহ আরো অনেক রোগীকে বাইরে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক চেকআপ শেষে সবাইকে সিরিয়ালি ভর্তি করা হয়েছে। সময় আসন্ন থাকায় দুইজন রোগী বাইরে সন্তান প্রসব করেন। শুনে চিকিৎসক ও নার্সগন তাদেরকে ভেতরে নিয়ে আসেন। সর্ব সাকুল্যে দুই রোগী মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ঐ ওয়ার্ডে অবস্থান করেছিলেন। এছাড়া যে শিশুটি মারা গেছে, মাতৃগর্ভে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫ মাস। এই বয়সে ডেলিভারী শিশুদের বেঁেচ থাকার সম্ভাবনা ০-১ %।
এ ব্যাপারে ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, হাসপাতালের মধ্যে লেবার ওয়ার্ডটি পুরোটা সময় সচল থাকে। সেই ওয়ার্ডের চিকিৎসা ও ওটি খুব কম সময় বন্ধ থাকে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় দুই জন নারী বাইরে সন্তান প্রসব করেছেন। তারা হাসপাতালে একদম অন্তিম মুহুর্তে এসে পৌঁছেছিলেন। একজন গোলাপগঞ্জ থেকে আর আরেকজন কোম্পানীগঞ্জ থেকে। এতটুকু জায়গা মাড়িয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে যানবাহন জটিলতার কারণেও প্রসবকালিন মুহুর্ত আরো এগিয়ে যায়। আর মৃত্যুবরণকারী শিশুটির মাত্র ৫ মাসের ছিল। তাই এটাকে নিছক দুর্ঘটনা বলা ছাড়া কোন উপায় নাই।
তিনি বলেন, আমরা পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়েছি। সেইখানে চিকিৎসক ও নার্সদের গাফিলতি ধরা পড়েনি। কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি। হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে সব রোগীর অধিকার সমান। মুমূর্ষ রোগীদের ক্ষেত্রেও তাই। একজন মুমূর্ষ রোগী আরেকজন মুমূর্ষ রোগীকে নিজ থেকে সিরিয়াল আগাতে দেয়না। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কি করার আছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে ইমার্জেন্সী রোগীর প্রতি গুরুত্ব বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি।