সিলেট চেম্বারে সদস্য ফি বেড়েছে ৭-৮ গুণ!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৫, ৩:৩০:০২ অপরাহ্ন
ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভ
এমজেএইচ জামিল : নতুন সদস্য আহ্বান ও পুরাতনদের সদস্য পদ নবায়নের সময়সীমা ঘোষণা করেছে সিলেটের ব্যবসায়ীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি। গত ২৯ জুন সিলেট চেম্বারের দায়িত্বে থাকা প্রশাসক ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে নতুন ফি নির্ধারণ করা হয়। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।
এদিকে হঠাৎ করে ৬ থেকে ৮ গুণ পর্যন্ত ফি বাড়ানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজ। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বেকায়দায়। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি নতুন বিধিমালার আলোকে সিলেট চেম্বার সহ বাংলাদেশের সকল চেম্বার ও এসোসিয়েশনের সদস্য ফি কোন বিভাগীয় চেম্বার, জেলা চেম্বার, এসোসিয়েশন কারো সাথে আলাপ আলোচনা না করে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ী মহলে অত্যন্ত বিরোপ প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে। বিগত সেশনে অর্ডিনারী নতুন সদস্য ফি ছিলো ৩ হাজার টাকা, বর্তমানে তা বর্ধিত করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা, অর্ডিনারী নবায়ন সদস্য ফি ছিলো ২ হাজার টাকা, বর্তমানে তা বর্ধিত করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা, এসোসিয়েট নতুন সদস্য ফি ছিলো ২ হাজার ৫ শত টাকা, বর্তমানে তা বর্ধিত করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এসোসিয়েট নবায়ন সদস্য ফি ছিলো ১ হাজার ৫ শত টাকা, বর্তমানে তা বর্ধিত করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা।
সিলেটের ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা জানান, বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা-২০২৫ এর উপধারা ১৪ (৩) এবং চেম্বারের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নতুন সদস্যপদের ক্ষেত্রে ভর্তি ফি ও বার্ষিক চাঁদা একত্রে প্রদান করার আদেশ দেওয়া হয়। সদস্য ফি বাবদ এতো টাকা দেওয়া সাধারণ ব্যবসায়ীদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে নতুন ফি প্রত্যাহার করে পূর্বের হারে সদস্য ফি নির্ধারণের দাবী জানিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ী সমাজ। এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কামনা করে গত ১ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবরে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলার পক্ষ থেকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
দোকান মালিক সমিতিরি সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপনের নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সাবেক সহ সভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী, মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি পাভেল, দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক নিয়াজ মো: আজিজুল করিম, ব্যবসায়ী আবুল কালাম, মো. মনিরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম সুমন, মো. রোকন সরকার, মো. শাহজাহান আহমদ, মো. শাহেদ আহমদ, আহমদ ফোয়াদ বিন রশীদ, মীর মো. জাকারিয়া, আব্দুস ছোবহান, তাহমিদুল হাসান জাবেদ, আতাউর রহমান রজব, মো. রুমেল আহমদ ও ফরহাদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে চেম্বারের সাবেক কয়েকজন দায়িত্বশীলের সাথে আলাপকালে তারা জানান, চেম্বারের বর্তমান ফি মোটামুটি ঠিক আছে। বিগত দিনে দেখা গেছে ফি কম থাকায় একাধিক ব্যক্তি নিজের ভোট বৃদ্ধি করতে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সদস্য বানিয়েছেন। এজন্য তারা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরকেও সদস্য বানিয়েছেন। এ নিয়ে বিগত সময়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর ফি কিছুটা বেশী হলে তখন অনেকেই চাইলে ইচ্ছামতো অতিরিক্ত সদস্য বানাতে পারবেন না।
তবে এ নিয়ে সিলেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশী সরব হয়েছেন। তারা বলছেন, অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন থাকে চেম্বারের সদস্য হওয়ার। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করার। কিন্তু বর্তমানে এই ফি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণরুপে অযৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। নতুন ফি প্রত্যাহার করে পুর্বের হারে ফি নির্ধারণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান তারা।
এ ব্যাপারে দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক নিয়াজ মো: আজিজুল করিম বলেন, নতুন নির্ধারিত ফি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। এমনিতেই ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সিলেট চেম্বার নিয়ে নানা সংকট চলছে। এরমধ্যে এত বেশী ফি নির্ধারণ করলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী সদস্য হতে পারবেনা। তারা আগ্রহ হারাবে। চেম্বারের কাজ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা। ব্যবসায়ীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা নয়।
তিনি বলেন, একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্স ফি ও ইনকাম ট্যাক্স দেয়। চেম্বারের সদস্য হওয়ার তার অধিকার। অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ করে তাকে চেম্বারের সদস্য হওয়ার থেকে বঞ্চিত রাখা অন্যায়। যারা ভোট বৃদ্ধি করতে নিজের কর্মচারীকে সদস্য বানাতে চাইবে তারা ফি ১০০ গুণ করলেও করতে পারবে। কারণ তাদের কাছে টাকা কোন ব্যাপার না। আর একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিজেই সদস্য হতে হিমশিম খাচ্ছে তার কর্মচারীকে সদস্য বানানো ত কল্পনাই করা যায়না। আমরা নতুন ফি প্রত্যাহার ও পুর্বে ফি নির্ধারণের দাবীতে বাণিজ্য উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছি। প্রয়োজনে কর্মসূচী করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট চেম্বারের প্রশাসক ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, ফি নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এটা শুধু সিলেট নয়, সারা বাংলাদেশের সব চেম্বার ও ব্যবসায়ী সমিতির জন্য করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যে কোন সিদ্ধান্ত কেবল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ই নিতে পারবে। আমরা বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবো।