সিলেটে পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিনে সাড়া নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১০:০২:১১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : পাথর কোয়ারি খুলে দেয়াসহ ৫ দফা দাবীতে শনিবার (৫ জুলাই) সিলেটে শুরু হওয়া ৪৮ ঘন্টার পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিনে মিলেনি সাড়া। পণ্য পরিবহনসহ সবধরণের যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এছাড়া ধর্মঘট নিয়ে শ্রমিকদের দুটি পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ফলে জনজীবনে ধর্মঘটের কোন প্রভাব পড়েনি।
এদিকে সিলেট জেলা পণ্য পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ জেলা প্রশাসকের অপসারণের দাবি থেকে সরে এসেছে। পূর্বঘোষিত পাঁচ দফা দাবির তালিকা থেকে এই দাবি বাদ দিয়েই শনিবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে জেলার সর্বত্র পণ্য পরিবহন ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
ধর্মঘটের কারণে সকালের দিকে জেলার বিভিন্ন সড়কে ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল প্রায় বন্ধ ছিলো। এতে পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা দেখা দিলেও বিকেলের দিকে স্বাভাবিক হতে দেখা গেছে।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলার সব মালিক-শ্রমিক একত্রিত হয়ে যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। সকাল ৬টা থেকে সিলেট জেলায় শুরু হয় পণ্য পরিবহণ ধর্মঘট। তবে ছুটি ও আশুরার দিন হওয়ায় এই ধর্মঘটে বিশেষ কোনো প্রভাব কোথাও পড়তে দেখা যায়নি। আন্দোলনকারী নেতাদের মধ্যেও এমন দিনে ধর্মঘট ডাকা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়া, ক্রাশার মেশিন ধ্বংস অভিযান বন্ধ করা, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটকানো বন্ধ, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ এবং সিলেটের জেলা প্রশাসকের অপসারণ, এই ৫ দফা দাবি নিয়ে ধর্মঘট শুরু করে সিলেটের ট্রাক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
তবে শনিবার কর্মসূচিতে দাবি নম্বর পাঁচ পরিবর্তন করে সেখানে বিআরটিএ অফিসে শ্রমিক হয়রানি বন্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই আন্দোলনের নেতা এবং সিলেট জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. দিলু মিয়া।
তিনি জানান, সিলেট জেলার সকল মালিক-শ্রমিক এক হয়ে এই আন্দোলনে নেমেছেন। তিনি আরও জানান, দাবি আদায় না হলে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতির পর সিলেট জেলার সকল গণপরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
প্রাথমিক ঘোষণায় দাবি নম্বর পাঁচে ছিল সিলেটের জেলা প্রশাসকের অপসারণ। তবে শনিবার কর্মসূচিতে সেটি বাদ দিয়ে নতুনভাবে বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট দাবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ পরিবর্তন নিয়ে নেতারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের কারণেই তারা জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবিকে পাশ কাটিয়েছেন বলে অনেক পরিবহন নেতারা মনে করছেন।
যদিও বিএনপি নেতা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবিতে মাঠে নেমেছিলেন।
এদিকে এই আন্দোলনের সময়সূচি এবং প্রেক্ষাপট নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন পাথর মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা। তারা বলেন, ‘শনিবার সরকারি ছুটি এবং রোববার পবিত্র আশুরা, এমন দুটি দিনে কর্মবিরতি ডাকা অযৌক্তিক। আশুরা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনে ধর্মঘট বা বিক্ষোভ গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রসঙ্গত- সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেয়াসহ নানা দাবীতে বেশ কিছু কর্মসূচি পালনের পর গত বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ৫ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য ধর্মঘট শুরুর হুশিয়ারি দেন পরিবহন নেতারা।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্মঘট নিয়ে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। রোববারও পণ্য পরিবহণ ধর্মঘট থাকছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী একাধিক নেতা।
৭ জুলাই নগরীতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক আয়োজিত বিএনপির একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত থাকবেন। ফলে ঐ দিন কোন ধর্মঘট থাকবেনা বলে আন্দোলনকারীদের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। যদিও এ নিয়ে খোদ আন্দোলনকারীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।