এডভোকেট জুবায়েরের বক্তব্যে চাঞ্চল্য
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১২:২২:১৭ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ‘জামায়াত নেতার প্রশংসা করে যা বললেন পরিবেশ উপদেষ্টা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য মিডিয়ায়। লক্ষণীয় যে, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের একটি প্রস্তাব সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। তিনি বলেছেন, ঢাকার নদী, বিশেষ করে বুড়িগঙ্গা পরিষ্কার রাখতে চাইলে মেয়র ও রাজনীতিবিদদের বছরে অন্তত: দু’বার নদীতে গোসল করতে হবে। তার মতে, মেয়র, এমপি, ডিসি, এসপি, ডিআইজি, কমিশনার, মন্ত্রী সবাই মিলে যদি বছরে দু’বার নদীতে গোসল করেন, তাহলে মানুষ উৎসাহিত হবে এবং নদীগুলো আপনাতেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। গত ২৬ জুলাই রাজধানীর একটি আলোচনা সভায় দেওয়া তার এই বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকেই এর প্রশংসা করেন। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানও জামায়াত নেতার এই বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রশংসা করেন।
এডভোকেট জুবায়েরের এই বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্য্য বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে। তার বক্তব্যে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে তা হচ্ছে, বর্তমানে দেশের খাল বিল ও নদী নালাসহ সর্বত্র ও যে ভয়াবহ দূষণ চলছে, তা দূর করতে হলে ক্ষমতার উচ্চ মহলের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। একটি পরিবেশ গ্রুপ বা স্থানীয় সচেতন কিছু লোক চাইলেই পরিবেশ দূষণের মতো জাতীয় সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিকেও উপদেষ্টা রিজওয়ানা ইংগিত করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদরাই দেশের সমস্যার সমাধান দেবেন। আমাদের দেশের রাজনীতির প্রথা যদি সফল হতো, তাহলে আমাদেরকে আর দায়িত্ব নিতে হতো না হয়তো বা। আমাদের আসতে হয় একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে মাঝখানের একটা যোগসূত্র করে দেয়ার জন্য। কিন্তু শেষ সমাধানটা কিন্তু রাজনীতিবিদদের মাধ্যমেই আসতে হবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা এখানে ক্রাইসিস বা সংকটের কথা বলেছেন। তিনি ঠিকই বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে বিশেষ করে গত দেড় দশকে এদেশে এক মহাসংকট তৈরী হয়েছে পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। নদী নালাসহ প্রতিবেশ ভয়াবহ দূষণের শিকার হলেও এবং এর ফলে আশপাশের এমনকি দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেই পরিবেশ দূষণ বন্ধে নেতামন্ত্রী ও আমলারা প্রায় নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। বুড়িগঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন নদী ও খাল নালার পানি দূষিত হয়ে মাছসহ এগুলোর জলজ প্রাণী বিষাক্ত ও ধ্বংসের উপক্রম হলেও এসব জলাশয়কে রক্ষার তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নেতামন্ত্রী ও আমলাদের এসব নদী ও জলাশয় ব্যবহার করতে হয়নি কখনো। কখনো এসব জলাশয় দিয়ে তাদের চলতে কিংবা এগুলোর পানি ব্যবহার করতে হয়নি তাদের, গোসল তো দূরের কথা। তারা সরকারী অর্থে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করেছেন। চলাফেরার জন্য নৌপথ ব্যবহার না করে আকাশ ও সড়ক পথ ব্যবহার করেছেন। তাই বুড়িগঙ্গা দিয়ে চলাচলকারী নৌযানগুলোর যাত্রী ও চালকদের মতো মুখে রুমাল চাপা দিতে হয়নি নদীর পানির দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাবার জন্য।
শুধু পরিবেশ নয়, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আইন শৃংখলা নষ্ট হলেও এসব নেতামন্ত্রী ও আমলা নির্বিকার থেকেছেন, এমনকি এগুলোর পেছনে মদদ যুগিয়েছেন। কারণ এ ধরনের পরিবেশে তাদের থাকতে হচ্ছে না। তারা থাকছেন সুরক্ষিত এসকর্টের মধ্যে নিরাপদে, তাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করছে বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অনেকের অবস্থান ও পেশা-ব্যবসা দেশে হলেও তাদের পরিবার বসবাস করছেন বিদেশে নিরাপদে। তাদের ছেলে-মেয়েরা যদি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতো তবে, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতেন তারা। দেশে যদি আরো দশজন নাগরিকের মতো জীবন যাপন করতো তাদের পরিবার সর্বোপরি দেশ, মাটি ও জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হতো তবে আইন শৃংখলাসহ দেশের পরিবেশকে সুন্দর ও নিরাপদ করার জন্য এসব নেতা মন্ত্রী মেয়র ও আমলারা সচেষ্ট ও সচেতন হতেন। এডভোকেট জুবায়ের সামগ্রিকভাবে এসব বিষয়ের প্রতি পরোক্ষ ইংগিত করেছে। তাই তার গভীর চিন্তাশ্রয়ী ও ইংগীতবাহী বক্তব্যটি সবাইকে নাড়া দিয়েছে, নাড়া দিয়েছে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা উপদেষ্টাকেও।





