মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অধ্যাপকের গবেষণার স্বীকৃতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ৬:৩৮:২৮ অপরাহ্ন

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: বাংলাদেশি অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় রিসার্চ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তিনি ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) এর ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক এবং সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। এই অ্যাওয়ার্ডটি তাকে মালয়েশিয়ার গবেষণা ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানের জন্য দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ার ইউকেএম এ গবেষণা করছেন এবং ন্যানো স্যাটেলাইট সহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ইউকেএম এর একটি গবেষণা দলের প্রধান, যেখানে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা গবেষণা করছেন। এর আগে, তিনি বেশ কয়েকটি স্বর্ণপদক এবং অন্যান্য পুরস্কারও পেয়েছেন।
মালয়েশিয়ার শীর্ষ পাঁচ গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম)-এর প্রকৌশল ও নির্মিত পরিবেশ অনুষদ (এফকেএবি) শুক্রবর (৮ আগষ্ট) বাঙ্গি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করল তাদের বহুল প্রতীক্ষিত গ্লোরিয়াস অ্যাওয়ার্ডস অ্যান্ড ডিনার নাইট।
আড়ম্বর, সৌন্দর্য ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতার মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই বার্ষিক আয়োজনের উদ্বোধন করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক) প্রফেসর ড. আবদুল হালিম আবদুল গাফোর।
অনুষ্ঠানটি অনুষদের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মীদের নিষ্ঠা, সাফল্য এবং অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার এক মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চে পরিণত হয়—যা আবারও দৃঢ় করল শিক্ষা, গবেষণা ও পেশাগত উৎকর্ষে অনুষদের সুনাম।
রাতের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত ছিল প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম-এর বিরল সাফল্য। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করা এই খ্যাতিমান গবেষক টানা তৃতীয়বারের মতো গবেষণা উৎকর্ষতা পুরস্কার অর্জন করেছেন—যা তাঁর দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক উদ্ভাবনী গবেষণার স্বীকৃতি বহন করে।
সম্প্রতি ড. তারিকুলের নেতৃত্বে একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে, যা হাড় ভাঙা শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। প্রচলিত এক্স-রে পদ্ধতির পরিবর্তে এখানে ব্যবহৃত হচ্ছে সম্পূর্ণ নিরাপদ, পোর্টেবল ও অ-আক্রমণাত্মক মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তি।
বিশেষভাবে নকশা করা “মেটামেটেরিয়াল” অ্যান্টেনা শরীরে ক্ষতিকর বিকিরণ ছাড়াই মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ পাঠায় এবং সেই তরঙ্গের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করে হাড় ভাঙা আছে কিনা এবং কী ধরণের ভাঙন হয়েছে। উন্নত মেশিন লার্নিং সফটওয়্যার তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্ভুলভাবে ফলাফল দেয়—যা দ্রুত রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করতে পারে হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স এমনকি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও।
বর্তমানে ইউকেএম-এর ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ড. তারিকুল জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-তে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও কর্মরত। ২০২০ সাল থেকে তিনি নিয়মিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত “নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস” ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ ২% বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পাচ্ছেন। এই র্যাঙ্কিং নির্ধারিত হয় সাইটেশন মেট্রিকস-যেমন h-ইনডেক্স, সহলেখক-সমন্বিত hm-ইনডেক্স এবং SCOPUS ডাটাবেসের সমন্বিত স্কোর (c-score) অনুযায়ী।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি কাতার, সৌদি আরব ও জাপানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ যৌথ গবেষণা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইউকেএম-এ তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অত্যাধুনিক অ্যান্টেনা ল্যাবরেটরি, স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন এবং ম্যাটেরিয়াল প্রিপারেশন ল্যাব যা মালয়েশিয়ার গবেষণায় এক নতুন মানদন্ড তৈরি করেছে।
একজন চার্টার্ড প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার ((CEng)), ফেলো, IET (UK), সিনিয়র মেম্বার IEEE এবং সিনিয়র মেম্বার IEICE (Japan) হিসেবে ড. তারিকুল আন্তর্জাতিক প্রকৌশল সমাজে সুপরিচিত। তাঁর গুগল স্কলার সাইটেশন সংখ্যা ৩২,০০০-এর বেশি এবং h-ইনডেক্স ৭৭ যা গবেষণা প্রভাবের শীর্ষ স্তরকে নির্দেশ করে।
গবেষণার পাশাপাশি তিনি IET Electronics Letters, SENSORS, Nanomaterials, IEEE Access Ges Scientific Reports সহ একাধিক আন্তর্জাতিক জার্নালের সম্পাদক, অতিথি সম্পাদক এবং সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই রাত কেবল একটি পুরস্কার বিতরণী ছিল না। এটি ছিল একাডেমিক উৎকর্ষ, উদ্ভাবন এবং ইউকেএম-এর বৈশ্বিক গবেষণা উপস্থিতির এক প্রাণবন্ত উদযাপন। অতিথিরা অনুষ্ঠান শেষে অনুষদের সাফল্যে গর্বিত ও ভবিষ্যৎ অর্জনের আশায় অনুপ্রাণিত হয়ে ফিরে যান।







