‘কিলিং মেশিন’ জেনারেল জিয়াউল আহসান!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ৯:৪৬:০৫ অপরাহ্ন
হিটলারের ঘনিষ্টতম জেনারেল আইখম্যান ছিলো তার খুন গুমের অন্যতম সহযোগী। বলা হয়, জেনারেল আইখম্যান ৬০ লাখ ইহুদীকে হত্যা করেন হিটলারের নির্দেশে। ৬০ লাখ ইহুদী হত্যার পর আইসম্যান সদম্ভে ঘোষণা করেন, আমার সমাধিতেও ঝাঁপ দিতেও এখন আমার কোন দুঃখবোধ নেই। এতো গেলো দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধকালীন খুন গুমের ইতিহাস। বর্তমান সময়ে বিশেষভাবে গত ১৬ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে এমন নৃশংস খুন গুমের ঘটনা প্রত্যাশিত তো নয়ই বরং কল্পনাতীত। আর এমন কল্পনাতীত ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে। সম্প্রতি ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকায় ‘সিরিয়াল কিলার জিয়াউলের শিকার ১০৩০ জন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটার অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘একজন আসামী আছে যার ব্যাপারে তদন্ত করে পেয়েছি সে মাথায় গুলি করে ১ হাজার ৩০ জন মানুষকে হত্যা করেছে। গুম করে মানুষদের আয়নাঘরে রাখা হয়েছিলো। তার একটা নেশা ছিলো, এই গুম ব্যক্তিদের হাত পাপ চোখ বেঁধে নৌকায় করে মাঝ বুড়িগঙ্গায় নিয়ে যেতো। গুলি করে লাশটা নদীতে ফেলতো। গুলিটা ভিকটিমের মাথার কাছে নিয়ে করতো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এটা কেনো? তার জবাব, গুলি করার পর নিহত ব্যক্তির মগজ ও রক্তের গরম ছিটা হাতে লাগলে দারুণ ফিলিংস অনুভব হতো।’ কে এই ভয়ানক খুনী? এই হিং¯্র খুনীর নাম মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
জানা গেছে, পলাতক শেখ হাসিনা এবং তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের একান্ত অনুগত ও বিশ^স্ত ছিলো সে। তাদের নির্দেশে গুম করে আয়নাঘরে রাখতেন ভিকটিমদের। সেখান থেকে বিভিন্ন কায়দায় খুন করে লাশ গুম করে দেয়া হতো। জিয়াউল আহসান মাইক্রোবাসে করে পোস্তগোলা ব্রিজ, কাঞ্চন ব্রিজ কিংবা কাঁচপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে লাশ ফেলে দিতেন শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে। একদিনে একজনকে দিয়ে ১১ টি এবং আরেকজনকে দিয়ে ১৩ খুন করারও রেকর্ড আছে। কখনো মাইক্রোবাসেই ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলা হতো। এরপর লাশ রেললাইনের ওপর শুইয়ে দেয়া হতো। ট্রেন এসে লাশ দ্বিখন্ডিত ত্রিখন্ডিত করতো। ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ট্রেনে কাটা যতো অজ্ঞাত পরিচয় লাশ পাওয়া যেতো, তার সবই জিয়াউল আহসানের খুন করা। বেশীর ভাগ খুন করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে। একটি নির্দিষ্ট নৌকা ছিলো। সেই নৌকায় করে যমটুপি পরা ব্যক্তিদের মাঝনদীতে নিয়ে টুপি খোলা হতো। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই থাকতো। মাথার একেবারে কাছে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতো ঘাতক জিয়াউল। ফিনকি দিয়ে রক্ত মগজ এসে পড়তো তার হাতে। তখন তিনি উল্লাস করতেন। কখনো আবার দেখা যেতো আগেই হত্যা করা লাশ নৌকায় তুলে নীচে ও উপরে সিমেন্টভর্তি বস্তার সঙ্গে বেঁধে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিতো, যাতে পানির নীচে তলিয়ে যায়। হতভাগ্য বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও এমনই পরিণতি ঘটে জিয়াউলের হাতে এমনটি বেরিয়ে এসেছে তদন্তে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশে^র ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারদের কাহিনী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩শ জনকে পর্যন্ত খুন করার ইতিহাস রয়েছে। বিশে^র কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারদের ভয়ংকর কাহিনী ম্লান হয়ে গেছে জিয়াউল আহসানের খুন গুমের কাহিনী দ্বারা।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, যে ব্যক্তি ৩ বা ততোধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে অস্বাভাবিক মানসিক তৃপ্তি লাভ করে সে সিরিয়াল কিলার। খুনের নেশায় মত্ত থাকে সিরিয়াল কিলাররা। আর এ ধরনের মানসিকতার পেছনে থাকে এক ধরনের মানসিক বৈকল্য, যাকে সাইক্রোপ্যাথি বা অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার বলা হয়। একথা অনস্বীকার্য যে, এদেশের বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনীতে জিয়াউল আহসানদের মতো সাইকোপ্যাথ সিরিয়াল কিলারদের সৃষ্টির পেছনে যে সবচেয়ে দায়ী সে হচ্ছে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। সে নিজেও একজন সাইক্রোপ্যাথ। যারা তাকে ঘনিষ্টভাবে দেখেছেন তারা তার মাঝে এই ভয়ংকর মানসিকতা দেখতে পেয়েছেন। এমনকি বেশ ক’বছর আগে একটি আদালতও তাকে সাইকোপ্যাথ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাই হিটলার জেনারেল আইখম্যানের মতো সাইকোপ্যাথ খুনী সৃষ্টির জন্য যেমন দায়ী তেমনি শেখ হাসিনাও জিয়াউল আহসানের মতো দানবীয় খুনি বা কিলিং মেশিন সৃষ্টির জন্য দায়ী।



