দুর্নীতির শিকলে বাঁধা বিমান বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১:০০:২৪ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রবাসী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকলেও তারা স্বদেশের পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ব্যবহার করতে সচেষ্ট থাকেন। কিন্তু বিমানের নানা অনিয়ম ও যাত্রী সেবায় গাফিলতির কারণে অনেকেই অন্যান্য বিদেশী এয়ারলাইন্স ব্যবহার করেন। শুধুমাত্র এই প্রবাসীরা যদি বিমান চড়তেন তবে বিমানের আয় বিশ্বের যে কোন অন্যতম এয়ারলাইন্সের সমকক্ষ হতো, এমন অভিমত সচেতন মহলের। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিমানে বিদ্যমান অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বহুলাংশে দূর হয়েছে। ইতোমধ্যে বিমান রেকর্ড ৯৩৭ কোটি টাকা মুনাফাও করেছে। দীর্ঘকাল লোকসানদাতা প্রতিষ্ঠানের দুর্নাম শেষে বিমান এখন কিছুটা হলেও হালে পানি পেয়েছে।
এসব কিছু সত্বেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখনো বিশ্বের ১০০ টি ভালো এয়ারলাইন্সের লিস্টে নেই। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিচালনার জন্য সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছে সংস্থাটি। অবকাঠামো গড়ে তোলা, উড়োজাহাজ সংগ্রহ ও এজন্য দরকারী সভরেন গ্যারান্টি, দেশের বিমান বন্দরগুলোর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ পাওয়া সত্বেও প্রায় সব ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, গত ৫৪ বছরে ভালো এয়ারলাইন্সের কাতারে যেতে পারেনি বিমান। উল্টো ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটি, ফ্লাইট বাতিল, সূচী পরিবর্তন, অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের চেয়ে বেশী ভাড়া, ফ্লাইটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও খাবারের মান নিয়ে প্রশ্নসহ বিভিন্ন কারণে সমালোচনা পিছু ছাড়েনি সংস্থাটির।
যাত্রী সেবার মানে সন্তোষ্টির ভিত্তিতে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোর র্যাংকিং করে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট রেটিং প্রতিষ্ঠান ‘স্কাইট্র্যাক্স’। ২০২৫ সালে স্কাইট্র্যাক্সের করা শীর্ষ ১০০ এয়ারলাইন্সের তালিকায় বিমান বাংলাদেশের নাম নেই। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় বিমান এয়ারলাইন্সের আছে ৯ নম্বরে। নিরাপত্তা ও গুণগত মানের বিচারে ২০১৬ সালে স্কাইট্র্যাক্সের করা বিশ্বের ২১ টি খারাপ এয়ারলাইন্সের তালিকায় নাম ওঠেছিলো বিমানের।
স্কাইট্র্যাক্স জানিয়েছে, উড়োজাহাজের আসন, সুযোগ সুবিধা, খাবার ও পানীয়, ফ্লাইটে বিনোদনের ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন সূচক এবং ফ্লাইট ও ফ্লাইটের বাইরে কর্মীদের সেবার মান অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ তিন তারকা এয়ারলাইন্স হিসেবে সনদপ্রাপ্ত। যদিও এ সূচকগুলোর বেশীর ভাগের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিমানের যাত্রীরা।
আকাশ পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রীসেবার নিম্নমান, ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটি, দুর্ঘটনার শংকা, তুলনামূলক বেশী ভাড়াসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে আকাশপথের ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিমান। প্রবাসী কর্মী ছাড়া সাধারণ যাত্রীরা বিমানে ভ্রমণ পারতপক্ষে এড়িয়ে চলছেন।
বিমান সম্পর্কে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সদস্য ও আকাশ পরিবহন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ৫৪ বছরে একটি এয়ারলাইন্স উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যাওয়ার কথা। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার এই যে, বিমান এটা করতে পারেনি। বাংলাদেশে যাত্রীর অভাব নেই। বিমানের কাছে প্রত্যাশিত সেবা না পেয়ে এসব যাত্রী অন্য বিদেশী এয়ারলাইন্সে যাতায়াত করছেন। আসলে বিমানকে কখনোই একটি যুগোপযোগী এয়ারলাইন্স হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। একটি এয়ারলাইন্স পরিচালনার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থাপনা, পেশাদারিত্ব ও দক্ষ জনবল দরকার তা বিমানের নেই। চলতি হিসাবে মুনাফা দেখালেও অর্থাৎ সম্প্রতি বিমান রেকর্ড পরিচালনা মুনাফা করলেও প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার দায় ও দেনার মধ্যে ডুবে আছে সংস্থাটি। এসবই বিগত আমলের সরকারগুলোর সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের ফল। নি¤œ পর্যায় থেকে ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত ছিলো এই দুর্নীতি ও লুটপাটের চেইন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা করছে, এই শিকল ভেঙ্গে বিমানকে বের করে আনার।





