পাথরকান্ডে তছনছ অনেকের জীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩০:৪২ অপরাহ্ন

সিলেটে পাথর নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে কান্ড ঘটেছে, তা অতীতে কখনো ঘটতে দেখা যায়নি। বলা যায়, সিলেটের পাথর এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। তবে বর্তমান সময়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কোন ঘটনা ঘটলে তা শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অল্প সময়ের মধ্যেই বিশে^র বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর নামক পর্যটন কেন্দ্রের সাদাপাথর লুটের ঘটনা এখন বাংলাদেশসহ বিশে^র অন্যান্য স্থানে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের কাছে একটি বিশেষ আলোচনার বিষয়, ঔৎসুক্যের কারণ। সাদাপাথর পর্যটন স্থল থেকে পাথর লুট তথা পাথর চুরি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের অনেকের জন্য চরম লজ্জা ও অপমান বয়ে এনেছে। বিশেষভাবে একশ্রেণীর রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং প্রশাসনের বেশ কয়েকজন আমলা কর্তা ব্যক্তিদের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। বলা যায়, কঠিন পাথর অনেকের চোখে জল এনে দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এজন্য যে তাদের ভুগতে হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ পদধারীদের মান সম্মান ও মর্যাদা একবার হারিয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা সহজ নয়। রাজনীতির ময়দান কিংবা সরকারী চাকরীক্ষেত্র, উভয় ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। সম্প্রতি ‘সিলেটে পাথর লুটের ঘটনায় ডিসি এবং ইউএনও বদলি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাদাপাথরসহ সিলেটের বিভিন্ন কোয়ারি ও পর্যটন এলাকায় প্রকাশ্যে পাথর লুটপাট ও বালু উত্তোলন ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই পরিস্থিতিতে সিলেটের প্রশাসনিক নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বদলী হয়েছেন ডিসি এবং ইউএনও। পাথর লুটের ঘটনায় কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে ১০ টি সুপারিশের পাশাপাশি কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়। একই সঙ্গে লুটের ঘটনায় জড়িতদের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
দুদকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ৬ কর্মকর্তা এবং জেলা ও থানা পুলিশের শীর্ষ ২ কর্মকর্তা ছাড়াও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো ও বর্ডার গার্ড বিজিবিকেও দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া সাদাপাথর লুটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ ৪২ জন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
যাই হোক, সারাদেশে ৫১টি কোয়ারি আছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আছে ৮টি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরো ২০টি জায়গায় পাথর আছে। সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে এসব পাথর আসে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের ৮টি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশে ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেয়া হয়নি। সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সিলেটের কিছু ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। বিগত ৫ বছরে তারা নানাভাবে কোয়ারি ইজারা আবার চালুর চেষ্টা কগরেন। কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। এ অবস্থায় রাতের বেলা মানুষ অবৈধভাবে পাথর তুলতো। তবে ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর গত এক বছর দেদারসে পাথর লুটপাট শুরু হয়। এর জের ধরেই সাম্প্রতিক সময়ের সাদাপাথরসহ অন্যান্য পাথর লুটপাট কান্ড সংঘটিত হয়, যা দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি করে।
একথা অনস্বীকার্য যে, সিলেটের এসব পাথর কোয়ারির সাথে এ অঞ্চলের লাখো মানুষের জীবিকা জড়িত। এই পাথরের ব্যবসা, পাথর ভাঙ্গা ও পরিবহণের সাথেও বিপুল মানুষের ভাগ্য জড়িত। পাথর উত্তোলন বন্ধের ফলে এসব মানুষের জীবন ও জীবিকা মারাত্মক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে। বিষয়টি মানবিক। আবার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিগত কয়েক বছরে অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটাও বিবেচনায় নিতে হয়েছে কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের শীর্ষ মহলকে। অনেকের মতে, পরিবেশ তো মানুষের জন্যই। যদি মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়ে তবে পরিবেশ রক্ষা করে কী হবে? পরিবেশের চেয়ে জীবন ও জীবিকাকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। জীবন জীবিকাকে অগ্রাধিকার প্রদান করে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের। তাদের অভিমত এমনভাবে বিষয়টাকে হ্যান্ডেলিং বা মোকাবেলা করতে হবে যাতে সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙ্গে। তবে পাথর চুরি তথা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে অবশ্যই। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।





