‘মরণ’ সাইকেল বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১০:০০:৪০ অপরাহ্ন
গত জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। বেশ ক’বছর ধরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটা প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষকে এ পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। আদৌ কখনো নেয়া হবে কি-না, এরও কোন আলামত টের পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মোটরসাইকেল নামক মরণযন্ত্রের প্রাণ কেড়ে নেয়ার তান্ডব অব্যাহত রয়েছে। গত ২০ আগস্ট ‘১৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের প্রায় ৩২ শতাংশ মোটরসাইকেল আরোহী’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় মিডিয়ায়।
এতে বলা হয়েছে, ১৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ হাজার ৭৯৮ জন মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এতে আরো বলা হয়েছে, সড়কে এখন বড়ো ঝুঁকির যানে পরিণত হয়েছে মোটর সাইকেল। গত এক দশকে দেশে মোটর সাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। একই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার।
বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান অনুসারে গত ১৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ৩২ দশমিক ১৪ শতাংশই মোটরসাইকেল আরোহী। রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের বড়ো অংশ তরুণ, আছে শিশুও। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩০ হাজার ৭৭৩টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৩৩ হাজার ২৪৬ জন, আহত হয়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
বিআরটিএ বলছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১৩ মাসে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন সাড়ে ৫ হাজারেরও বেশী। এসব নিহতের মধ্যে কমপক্ষে পৌণে ২ হাজারই মোটরসাইকেল আরোহী। বিআরটিএ’র তথ্য অনুসারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ৮০ শতাংশ চালকের কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের ডাটা অনুসারে, গত ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশী অর্থাৎ ১১ হাজার ৮৬৪ জন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো প্রায় ১০ হাজার জন। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৮০৬টি শিশু মারা গেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৮৫ টি শিশু ছিলো। অর্থাৎ নিহত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ মোটর সাইকেল আরোহী।
লক্ষণীয় যে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের একটি বড়ো অংশ চিকিৎসা নেন নিটোরে। নিটোর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন থেকে গত জুন পর্যন্ত এ বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ২২ হাজার ৬৪৫ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত মানুষের সংখ্যা ৮ হাজার ১৫০ জন।
বলা বাহুল্য, বিকল্প যানবাহন বিশেষভাবে গণপরিবহনের সুবিধা অত্যন্ত সীমিত ও অপর্যাপ্ত হওয়ায় বিগত বছরগুলোতে মোটরসাইকেলের উপর নির্ভরশীলতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তায় এই বিপজ্জনক দ্বিচক্রযানের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু মোটর সাইকেলের মতো ক্ষুদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ যানের চলাচলের জন্য কোন সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হয়নি দেশের কোথাও। একই সড়ক বা মহাসড়কে ট্রাক বাস কাভার্ড ভ্যানের পাশাপাশি চলছে মোটর সাইকেলের মতো ক্ষুদ্র যান। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বড়ো বড়ো যানবাহন মোটর সাইকেলের সংঘর্ষে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় না। তাই এসব বড়ো বড়ো যানের চালকরাও মোটরসাইকেলকে চাপা দিতে কিংবা আঘাত করার ঝুঁকি নিতে ভয় পায় না। ভয় পায় না তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে কিংবা ওভারটেইক করতে। এটাই নির্মম বাস্তবতা। আর নির্মমতার শিকার হয়ে প্রায় প্রতিদিন চুরমার হচ্ছে নাজুক এই যান, এর সাথে চুরমার হচ্ছে অগণিত তরুণ যুবকের স্বপ্ন। এর রাশ এখুনি টেনে ধরা দরকার। আর এটা করতে হবে সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, এমন আহ্বান ও অভিমত সচেতন মহলের।





