ঘটনাটি তুচ্ছ হলেও তাৎপর্যবাহী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩০:৪৮ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘সহজ প্রযুক্তির ব্যবহারে বাঁচলো সাপে কাটা রোগী’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নীলফামারীর কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নীরবে দারুন একটা কাজ করে ফেলেছেন, একজন দরিদ্র সাপে কাটা রোগীকে নির্ঘাত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছেন সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে। উপযুক্ত চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীর দমটা ধরে রাখতে ব্যবহার রেছেন আর্টিফিশিয়েল ম্যানুয়েল ব্রিদিং ইউনিট, যা অ্যাম্বু ব্যাগ নামে পরিচিত। এটি কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস প্রশ্বাস সহায়ক যন্ত্র। খুব মামুলি এই চিকিৎসাযন্ত্রের বেলুনের মতো ফোলা অংশটি হাতে চাপ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্টে থাকা রোগীকে শ্বাস চালিয়ে যেতে সাহায্য করা যায়। চিকিৎসা কেন্দ্রের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আব্দুল মতিন বর্ণিত সাপে কাটা রোগীকে পরীক্ষা করে বিষক্রিয়ার আলামত পান। তিনি বলেন, রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট ছিলো। দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা দেখা দেয়। তিনি দ্রুত রোগীর শ্বাসনালীকে টিউব ওয়েল সিদ্ধান্ত নেন। এরপর এক ডোজ অ্যান্টিভেনম দেয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে কোন আইসিইউ নেই। আইসিইউ ছাড়া বাকী ৯ ডোজ অ্যান্টিভেনোম দিয়ে রোগীকে আশংকামুক্ত করা অসম্ভব। সিদ্ধান্ত হয় রোগীকে রংপুরে পাঠানো হবে। কিন্তু শ্বাস প্রশ্বাস চালু রাখতে হবে। খুব দ্রুত গেলেও দেড় ঘণ্টা লাগবে। তখন অ্যাম্বু ব্যাগই ভরসা। সারা রাস্তা পালা করে স্বাস্থ্যকর্মীরা অ্যাম্বু পাম্প করে রোগীকে শ্বাস প্রশ্বাস দিয়ে রংপুরে নিয়ে যান। সেখানে দ্রুত আইসিইউ’র ব্যবস্থা করা হয়। সকলের প্রচেষ্টায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। উপরের ঘটনাটি সাধারণ চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি একজন রোগীকে সুস্থ করে তোলার এক অনন্য নজির। স্বাস্থ্যকর্মীদের বুদ্ধি ও মেধার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে মেধাবী মানুষের অভাব নেই। অভাব শুধু সুযোগ সুবিধার। প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পেলে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনে সক্ষম হতেন, এমন অভিমত সচেতন মহলের। শুধু চিকিৎসা নয়, সকল ক্ষেত্রেই এমনটি সম্ভব।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবের দরুণ প্রতি বছর এদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মেধাবী মানুষ বিদেশ চলে যাচ্ছেন। যারা দেশে থাকছেন, তারাও তাদের পেশাগত জীবনে তেমন কোন গুণগত পরিবর্তন আনতে পারছেন না। উদ্ভাবন দূরে থাক, স্বাভাবিক দায়িত্বটুকু পালনেও সক্ষম হচ্ছেন না বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ শফিকুজ্জামান বলেন, কোন দেশ কতোটুকু বিকাশমান তা নির্ভর করে সে দেশের মেধাবী তথা দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগানোর সামর্থ্যরে ওপর। মেধা পাচার সব ধরনের বিশেষজ্ঞদের ক্ষেত্রে ঘটলেও ডাক্তার, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, প্রধানতঃ যাদের ওপর দেশের অগ্রগতি নির্ভরশীল এই শ্রেণীর মেধাবীরাই অধিক হারে দেশত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি জমান। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতো মেধাবী মানুষ দেশত্যাগ করেছেন, তারা দেশে থাকলেও তাদেরকে কাজের বিশেষভাবে গবেষণা ও উদ্ভাবনের কাজে সহযোগিতা করা হলে বাংলাদেশ এখন উন্নতি ও অগ্রগতির শীর্ষ পর্যায়ে থাকতো। উপরের সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসার ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিত বুদ্ধি ও মেধার অনেকখানি প্রকাশ ঘটেছে। ঘটনাটি সামান্য হলেও এটা অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী বলে আমরা মনে করি।