বিরল মাটির বাহাদুরী!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩১:৩৭ অপরাহ্ন
বিশ্বে এক বিস্ময়কর অবস্থানে এখন চীন। প্রাকৃতিক সম্পদ ও নিজেদের প্রচেষ্টায় চীন উন্নতি ও সমৃদ্ধির এই স্বর্ণশিখরে অবস্থান করছে। অর্থবিত্ত ও সামরিক শক্তিতে এখন বিশে^র শীর্ষ অবস্থানে থাকা একটি দেশ চীন। সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের হাতে থাকা একটি খনিজ পদার্থের অভাব অচল করে দিতে পারে গোটা বিশ্বকে, তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের কারণও হতে পারে বস্তুটি। এটা হচ্ছে রেয়ার আর্থ ইলিমেন্টস (আরইই) অর্থাৎ বিরল মৃত্তিকা খনিজ। ‘বিরল মৃত্তিকা খনিজ’ হচ্ছে ১৭টি রাসায়নিক উপাদানের একটি গ্রুপ। এতে নিউডিয়ামিয়াম, ডিসপ্রোসিয়াম, সেরিয়াম, ল্যান্থানাম ও প্রাসিওডিয়ামিয়ামের মতো উপাদানগুলো উল্লেখযোগ্য। এই উপাদানগুলোকে বিরল বলা হয়, কারণ এগুলো বিশুদ্ধ আকারে পাওয়া এবং খনন করা কঠিন। বিরল মৃত্তিকা খনিজ পদার্থ আধুনিক প্রযুক্তি ও শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠেছে। ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পে এগুলো প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। নিওডিয়ামিয়াম ও প্রাসিওডিয়াসিয়াম শক্তিশালী চুম্বক তৈরীতে ব্যবহৃত হয়, যা স্মার্টফোন ও কম্পিউটারে ব্যবহৃত হয়। বলা বাহুল্য, সারা বিশে^ বৈদ্যুতিক গাড়ি ও যানবাহন ব্যবহারের প্রবণতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিরল মৃত্তিকা খনিজ পদার্থ ছাড়া এই যানবাহনের ব্যাটারী তৈরী করা সম্ভব নয়। হাইব্রিড যানবাহনে নিকেল ধাতু হাইড্রাইভ ব্যাটারী তৈরীতে ল্যান্থানাম ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া লেজার, রাডার ও গাইডেড অস্ত্রেও বিরল মৃত্তিকা উপাদান ব্যবহৃত হয়। অস্ত্রকে কার্যকর করতে সামারিয়াম-কোবাল্ট চুম্বকের মতো উপাদান ব্যবহার করা হয়। উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপ সহ্য করতে সক্ষম জেট ইঞ্জিন তৈরীতে ইট্রিয়াম নামক বিরল মৃত্তিকা উপাদান ব্যবহার করা হয়।
লক্ষণীয় যে, চীন বিশে^ সবচেয়ে বড়ো বিরল মৃত্তিকা খনিজ উৎপাদনকারী ও রফতানিকারী দেশ। চীন বিশ^ব্যাপী সরবরাহের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ২০২২ সালে চীন ও ২ লক্ষাধিক টন বিরল মৃত্তিকা অক্সাইড উৎপাদন করে, যা বিশে^র বাকী উৎপাদনের ৭০ শতাংশেরও বেশী। আমেরিকার মতো উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন দেশও বিরল মৃত্তিকা খনিজগুলোর জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। এই বিরল মৃত্তিকা খনিজ উপাদান রফতানী বন্ধ হওয়ার ভয়ে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ওপর অত্যধিক শুল্ক আরোপ থেকে বিরত রয়েছেন, যদিও চীন দেশটির নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে রাশিয়ার তেল কিনে চলেছে, বাণিজ্যসহ অন্যান্য সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। অপরদিকে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
বলা আবশ্যক, চীন যদি বিশে^ বিরল মৃত্তিকা খনিজ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে স্মার্টফোন, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও বায়ু টারবাইনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের দাম অনেক বেড়ে যাবে। অটোমোবাইলের মতো বিরল মৃত্তিকার উপর নির্ভরশীল শিল্পগুলো মন্দার সম্মুখীন হবে। সর্বোপরি বিরল মৃত্তিকা খনিজগুলো বর্তমানে এতো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে যে, তাদের ঘাটতি বিশ^যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা রাখে। এগুলো তেল ও গ্যাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে গত ৭০-৮০ বছরে। চীন অনেক আগেই এর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলো এবং এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলো। এ কারণে চীন এখন বিরল মাটির খনিজ পদার্থের ক্ষেত্রে একটি প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছেছে।