প্রেগন্যান্সিতে ক্লিনিক সন্ত্রাস!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৩:০৭ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ক্লিনিকের মূল ব্যবসা অস্ত্রোপচার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৪টি বেসরকারী হাসপাতালে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজারিয়ান ডেলিভারি হয়েছে প্রায় ৭ গুণ। অভিযোগ রয়েছে, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে জরুরী রোগীদের ভর্তি না রাখায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশু জন্মদান পদ্ধতিকে ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত করেছেন বেসরকারী হাসপাতালের মালিক বা ক্লিনিক মালিকেরা। এমন হারে সিজারিয়ান ডেলিভারি উদ্বেগ বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। এ প্রসঙ্গে জনৈক সিভিল সার্জন বলেন, সারাদেশে ক্লিনিকের সিজারে প্রসবের সংখ্যা বেশী। সরকারী হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের সংখ্যা বেশী। এখানে কিছু বিষয় কাজ করে। ক্লিনিক বা বেসরকারী হাসপাতাল মালিকদের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত এতে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাতৃত্বকালীন নানা জটিলতার কারণে সর্বোচ্চ ১০-১৫ শতাংশ শিশুর জন্ম সীজারিয়ান পদ্ধতিতে হতে পারে। তবে এর বেশী হওয়া উচিত নয়। ইতোপূর্বে একটি সংস্থা পরিচালিত জরীপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৭৭ শতাংশ সীজারিয়ান অপারেশন দেখা গেছে অপ্রয়োজনীয়। সরকার কঠোর ব্যবস্থার হুশিয়ারী দিলেও দুই বছরে ২০১৭-১৮ সালে আগের তুলনায় ৫১ শতাংশধ সীজার বেড়েছে। এটা ৫/৬ বছর আগের পরিসংখ্যান। বর্তমানে সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন’ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৫১ হাজার টাকারও বেশী। বছর দুয়েক আগে মিডিয়ায় ‘বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে অপ্রয়োজনীয় সিজার! শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, প্রসবকালীন জটিলতা সহজ করে মাতৃভূমির হার কমাতে ভূমিকা রাখা চিকিৎসা পদ্ধতি সীজারিয়ান বা সি-সেকশনকে বিতর্কিত করে তুলেছে বেসরকারী হাসপাতালের একশ্রেণীর অসাধু চক্র। এ বিষয়ে সকল জরীপই বলছে, সরকারী হাসপাতালের তুলনায় দ্বিগুণ সীজার বেসরকারী হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। বেসরকারী হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সীজার তাদের আয়ের অন্যতম উৎস। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩০ লাখ নারী গর্ভধারণ করেন। সরকারীভাবে এতো সংখ্যক নারীর নিয়মিত মাতৃসেবার পরিবেশ তৈরী না হওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলো। সরকারী হাসপাতালে কর্তব্যরতরা রোগীদের প্রতি যত্নশীল নয় বলে প্রসূতি মায়েরা নিরুপায় হয়ে ক্লিনিক বা বেসরকারী হাসপাতালগুলোর দিকে ঝুঁকছেন।
সুনামগঞ্জ রোগী কল্যাণ সমিতির জনৈক কর্মকর্তা বলেন, সরকারী হাসপাতালগুলোতে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে প্রায়শঃ বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এছাড়া সব কিছুতে লাভ খুঁজেন হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য জেলার জনৈক সাবেক সার্জন বরেন, স্বাভাবিক প্রসব বাড়াতে রোগী ও আত্মীয় স্বজনদের ধৈর্য ধারণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কাউন্সেলিং করতে হবে। ডাক্তারি পেশাতেও দালালি আছে। রোগী পাঠালে ওই হাসপাতাল কমিশন দেয়। এমন অনৈতিক কর্মকান্ড ঠেকাতেও উদ্যোগ প্রয়োজন।
বলা বাহুল্য, বিগত করোনার সময় যখন হাসপাতাল ক্লিনিকে রোগীর চাপ বেশী ছিলো এবং যাতায়াতের সুবিধা হ্রাস পেয়েছিলো, তখন সীজারিয়ান ছাড়াই ভুরি ভুরি প্রসব অর্থাৎ সন্তান জন্মদানের ঘটনা ঘটেছে এদেশে। অবস্থা দেখে অনেকে মন্তব্য করেছেন, ‘কথায় কথায় সীজারিয়ান অপারেশন অনর্থক ও অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। যা-ই হোক একশ্রেণীর হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক, চিকিৎসক ও সেবাকর্মীর লোভের ফাঁদে পড়ে প্রসূতি রোগীরা যাতে প্রতারিত না হন, সেদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরী। অন্যথায় কথায় কথায় প্রসূতির দেহে ছুরি চালানোর মতো ‘ক্লিনিক সন্ত্রাস’ চলতেই থাকবে, এমন উদ্বেগ সচেতন মহলের।