প্রতিবেশী নিয়ে আরবী প্রবাদ বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩০:১৭ অপরাহ্ন
আরবীতে একটি প্রবাদ আছে ‘আয্যার ক্বাবলাদ্দার, আর রফিক ক্বাবলাততারিক’ এর অর্থ হচ্ছে ‘বাড়িঘর করতে প্রতিবেশী এবং ভ্রমণকালে সঙ্গী ভালো কি মন্দ যাচাই করে নাও’। এই প্রবাদে প্রতিবেশীর চরিত্র আচার আচরণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ প্রতিবেশী ভালো না হলে একটি মানুষ বা একটি পরিবারের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠতে পারে। বাংলাদেশের চরম দুর্ভাগ্য এই যে, ভারতের মতো একটি বিশ^স্বীকৃত দুর্বৃত্ত দেশ তার প্রতিবেশী। আর যুগ যুগ ধরে এর খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ ও তার কোটি কোটি মানুষকে। ভারত বাংলাদেশের মতো তার একটি ক্ষুদ্র প্রতিবেশী দেশের জন্য বহু বড়ো বড়ো সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই শুরু হয়েছে এই দুর্বৃত্তপনা।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুযোগ পেয়ে ভারত ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ইচ্ছা খুশীমতো পানি প্রত্যাহার শুরু করে। অখ- পাকিস্তান থাকাকালে এটা করতে কখনো সাহসী হয়নি ভারত। সম্প্রতি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, ফারাক্কা ব্যারেজের কারণে অন্তত: ২০টি নদী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যৌথ নদী কমিশনে চিঠি দিয়েও ভারত থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, ভারতের বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের নদীতে তীব্র ¯্রােত তৈরী হয়ে বাঁধ ভেঙ্গে যায়, আর নতুন বাঁধ দিতে গেলেই বিএসএফ বাধা দেয়।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও নদী আজ সবচেয়ে অবহেলিত। অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা না পেয়ে এবং অভ্যন্তরীন অব্যবস্থাপনার কারণে দেশ ভয়াবহ পানি সংকটে পড়ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীতে পানি সংকটে পড়ছে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার, ফারাক্কা ও গজলডোবা ব্যারেজের কারণে শুষ্ক মৌসুমে ভাটির দিকে অর্থাৎ বাংলাদেশের দিকে নদীসমূহে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি, নাব্যতা, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর। দেশে প্রায় ১ হাজার ৪১৫টি নদী থাকলেও এর ক’টি এখন জীবিত তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অপরদিকে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। ফলে পানির স্তর ক্রমশঃ নীচে নামছে, কোথাও ৩ মিটার আবার কোথাও ৪০ মিটার পর্যন্ত নীচে নেমে গেছে ইতোমধ্যে।
এই হলো প্রতিবেশী ভারতের পানি নিয়ে দস্যুপনা। এর পাশাপাশি সীমান্ত হত্যার মতো নৃশংসতা চলছে অব্যাহতভাবে। চলতি বছরের গত ৭ মাসে ভারত সীমান্তে ২২ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৫ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের গুলিতে ও শারীরিক নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্ততঃ ১৫৮ জন, আহত হয়েছেন ১২৭ জন। শুধু পানি সন্ত্রাস কিংবা সীমান্ত হত্যাই নয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনীতির এমন কোন খাত বা ক্ষেত্র নেই যেখানে ভারতের অনভিপ্রেত ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ এবং ধ্বংসযজ্ঞ করেনি। বাংলাদেশে পুতুল সরকার বসিয়ে ঔপনিবেশিক কায়দায় দেশটিকে ব্যবহার, অসম বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ লুটে নেয়া, সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার, অবৈধ ভারতীয়দের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স আয়, অবৈধ ও অন্যায়ভাবে ট্রানজিট ও বিদ্যুৎ চুক্তি, বাংলাদেশী অসৎ ব্যবসায়ীদের সাথে সিন্ডিকেট করে কারসাজির মাধ্যমে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও ক্রেতাদের পকেট কাটা ছিলো এক সময় ছিলো ওপেন সিক্রেট। কিন্তু পুতুল হাসিনা সরকারের পতনের পর এক্ষেত্রে এসেছে আমূল পরিবর্তন। লুটতরাজের অবাধ সুযোগ হারিয়ে ভারত এখন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর মারাত্মক ক্ষেপে গেছে। বাংলাদেশী ভিসা দেয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশী পণ্যের ভারতীয় ট্রানজিট পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে তাদের প্রিয়পাত্রী তথা সেবাদাসী পূর্বের ক্ষমতাসীন পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা তার দল আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় বসাতে।
বলা বাহুল্য, একজন ভাড়াটে কিংবা একটি বাড়ির মালিক চেষ্টা করলে প্রতিবেশী বদলাতে পারে। অর্থাৎ সে বাসাবাড়ি পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু একটা দেশের পক্ষে তার প্রতিবেশী পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশ সেই অসম্ভবের পায়েই মাথা কুটে মরছে। না পারছে কুচক্রী ভারতের সাথে মিলে মিশে চলতে, না পারছে ভারতের নিকট থেকে দূরে সরে যেতে।
সর্বোপরি, উপরোক্ত আরবী প্রবাদ থেকে সৎ ও অসৎ প্রতিবেশীর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। বাংলাদেশও তা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছে।