ধনীদের শীর্ষে, দুর্নীতির শিখরে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩০:১৮ অপরাহ্ন
শেখ হাসিনার আমলে তারই পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতির টাকায় ফুলে ফেঁপে ওঠা আজিজ খান সিঙ্গাপুরের ৪৯তম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। সম্প্রতি মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই তালিকায় আজিজ খানের অবস্থান ৪৯তম। ফোর্বসের হিসাব অনুসারে আজিজ খানের সম্পদের পরিমাণ ১১০ কোটি ডলার। আর বিশে^র ধনীদের তালিকায় তার অবস্থান ২৭৯০তম।
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘১৫ বছরে দুর্নীতির শীর্ষে সামিট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া ব্যবসায়ীদের অন্যতম সামিট গ্রুপের কর্নধার মোহাম্মদ আজিজ খান। অল্প সময়ে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে তিনি সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন সাম্রাজ্য, নিয়েছেন নাগরিকত্বও। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ধনীদের তালিকায় উঠে এসেছেন দুর্নীতির বরপুত্রখ্যাত আজিজ খান। গত ১৫ বছরে হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ জ¦ালানী ও টেলিকম ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে গ্রুপটি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ সময়ে বার বার সামিট গ্রুপের অনিয়ম ও দুর্নীতি আলোচনায় এলেও ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। তবে ইতোমধ্যে সামিট গ্রুপের দুর্নীতির তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে আজিজ খান ও তার পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে, বাতিল করা হয়েছে সামিট গ্রুপের সঙ্গে করা দ্বিতীয় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের চুক্তিও। পর্যালোচনা করা হচ্ছে সামিটের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তিও। এছাড়া সামিটের টেলিকম ব্যবসার বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার জ¦ালানী উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জুনায়েদ আহমদ পলক, সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন সামিট গ্রুপকে সুবিধা দিতে সব সময় তৎপর থাকতেন। তাদের আশীর্বাদে টেন্ডার ছাড়াই একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প দেয়া হয় গ্রুপটিকে। দেওয়া হয় সরকারী জমি, কর ছাড়, প্রণোদনা দিয়ে জ¦ালানী তেল আমদানিসহ নানা সুযোগ। আবার দফায় দফায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ আদায়ের সুযোগ করে দেওয়া হয় গ্রুপটিতে।
বলা বাহুল্য, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিজের ভাই কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খানের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সরকারের সঙ্গে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি করে তারা। ২০১০ সালে হাসিনা সরকার বিদ্যুতের দায়মুক্তির আইন পাশ হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের পথ সুগম হয়। পিডিবি’র তথ্যানুযায়ী, সামিট গ্রুপের মালিকানাধীন ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তথ্যে দেখা গেছে, ১৩২৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ওই ৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপরীতে প্রতি মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে ১২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকারও বেশী। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দেশে গ্যাস সংকট থাকলেও সামিট গ্রুপকে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয় বিপিসি’র বিরুদ্ধে গিয়ে ২০১৩ সালে সামিট গ্রুপকে বছরে এক লাখ টন ফার্নেস ওয়েল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয় সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে। দেয়া হয় এতে ট্যাক্স অব্যাহতি। শুধু তা-ই নয়, উল্টো সরকারই ৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দেয় সামিট পাওয়ারকে। সামিট গ্রুপকে তেল আমদানির অনুমতি দেওয়ায় জ¦ালানী বিশেষজ্ঞরা আপত্তি তুলে বলেছিলেন, এতে ওভার ইনভয়েস কবে টাকা পাচার করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু ক্ষমতার শীর্ষ হল যখন সামিটের পক্ষে তখন এসব অভিযোগ প্রতিবাদ হওয়ায় মিলিয়ে যায়। এ বিষয়ে ক্যাব-এর জ¦ালানী বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সামিটের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। এ বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ বলে আসছি। জানা গেছে, বর্তমান সরকার সামিটের সাথে করা সকল চুক্তি রিভিউ করার কাজ শুরু করেছে। তারা যতো টাকা বেশী নিয়েছে, তা সুদ সমেত আদায় করতে হবে, এমন দাবি সচেতন মহলের।





