ফাইনালের স্বপ্ন আঁকতেই পারে বাংলাদেশ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:১৮:৫০ অপরাহ্ন
স্পোর্টস ডেস্ক : সাইফ হাসান হয়তো তার ‘মায়ের দেশ’ শ্রীলঙ্কাকেই চমকে দিয়েছেন। শুধু লঙ্কানদের নয়, বাংলাদেশের সমর্থকেরাও তার ব্যাটিং দেখে নতুন স্বপ্ন দেখছেন। এ স্বপ্ন ফাইনালের!
প্রথমেই জয় নিয়ে কথা বলা যাক। শেষ ওভারের উত্তেজনা বাদ দিলে, এটি ছিল এক পরিপূর্ণ ও তৃপ্তিদায়ক জয়। সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে বাংলাদেশ জয় পেলেও সেসব জয়ে আনন্দের উপকরণ তেমন বেশি ছিল না। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়টিকে তাই আলাদা করে রাখতেই হয়—অনেক দিন পর কোনো জয়ে সত্যিই মন ভরে গেছে।
মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন অনন্য। শুধু পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে না, তার বোলিং কতটা নিখুঁত ছিল। স্লোয়ার-কাটারের পাশাপাশি শনিবার পেস-অন ডেলিভারিও নিখুঁতভাবে করেছেন। বাড়তি বাউন্স আদায় করেছেন, গতির মিশ্রণ করেছেন দুর্দান্তভাবে। তার শৈল্পিক বোলিং না থাকলে হয়তো রান দাঁড়াত ১৮০। টানা কয়েক ম্যাচ ধরেই তিনি শান্ত থেকে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন-এ মুহূর্তে বাংলাদেশের একমাত্র প্রকৃত বিশ্বমানের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার।
শেখ মেহেদি হাসান ছিলেন কৌশলগত দিক থেকে অপরিহার্য। শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারে চার বাঁহাতি ব্যাটার থাকায় তার ভূমিকা ছিল বড়। দাসুন শানাকা পাঁচে নেমে পাল্টা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, মেহেদির বোলিং ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
অন্যদিকে শরিফুল ইসলামকে নেয়া হয়েছিল বাঁহাতি ম্যাচ-আপের কৌশল হিসেবে। তবে শরিফুল এখন রিদমের বাইরে এবং নতুন কিছু যোগ করতে পারেননি। রিদমে থাকলে হয়তো পুষিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু আপাতত তা হয়নি। তবুও এটিকে ব্যর্থ কৌশল বলা যায় না, কারণ ঝুঁকি নিলে কখনো কাজে লাগে, কখনো লাগে না।
ব্যাটিংয়ে শুরুতে তানজিদ হাসান আবারও থুশারার শিকার। ছয় ইনিংসে চারবার আউট, তার মধ্যে তিনবার বোল্ড—এটা শুধু টেকনিক্যাল দুর্বলতা নয়, বরং মানসিক লড়াইয়ে হেরে যাওয়া। তিনি মরিয়া হয়ে ক্রিজ ছেড়ে আক্রমণ করতে গিয়ে বরং বিপদ ডেকে এনেছেন।
লিটন দাস দারুণ শুরু করেছিলেন। তবে যে শটে আউট হলেন, তা হতাশাজনক। প্রতিপক্ষের সেরা বোলারের প্রথম ওভারে ঝুঁকি নেওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না।অন্যদিকে তৌহিদ হৃদয় কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন। অনেক সমালোচনা, ট্রল, দোষারোপ পেরিয়ে তিনি নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। তার বেস, শটের শেইপ—সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। এই ছন্দ যদি ধরে রাখতে পারেন, দলের মিডল অর্ডার সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ পাবে।
কিন্তু দিনের নায়ক ছিলেন সাইফ হাসান। শুরুতেই থুশারাকে পাল্টা আক্রমণ করে রান তাড়ার চাপ কমিয়েছেন। তার ব্যাটিং ছিল যেন ভিডিও গেমের মতো—যখন যা দরকার, তাই করেছেন। শুধু হাসারাঙ্গার বিপক্ষে স্লগ শটটি অপ্রয়োজনীয় ছিল। তবু তার সাহসী ব্যাটিং বাংলাদেশের জয়যাত্রাকে সহজ করেছে।
তার খেলা কয়েকটি শটের মধ্যে বিশেষভাবে চোখে লেগেছে একটি—লেগ-মিডলের অফ কাটার, যেখানে খুব বেশি ব্যাকলিফট না থাকা সত্ত্বেও কবজির জোরে যে টাইমিং করলেন, তা দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
সব মিলিয়ে, এই জয় শুধু পরিসংখ্যানের জন্য নয়, আত্মবিশ্বাসের জন্যও বড় প্রাপ্তি। আসল এশিয়া কাপ এখনই শুরু হলো। সামনে বুধবার ভারত ও বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সঙ্গে টানা ম্যাচ, সূচি কঠিন। তবুও এই জয়ের পর ফাইনালের স্বপ্ন আঁকতেই পারে বাংলাদেশ।