সুমুদ ফ্লোটিলা’র সাহসী যাত্রায় ইসরায়েলের আক্রমণ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১০:৩০ অপরাহ্ন
ত্রাণবাহী নৌবহর ঢুকতে পারেনি গাজায়, থুনবার্গসহ বিখ্যাত মানবাধিকারকর্মীরা আটক

জালালাবাদ রিপোর্ট: গাজাবাসীর জন্য ত্রাণসামগ্রী বহনকারী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ একটি বাদে বাকি সব জাহাজই নজিরবিহীনভাবে আটক করেছে ইসরায়েল। সুইডিশ জলবায়ু অ্যাকটিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গসহ জাহাজে থাকা বিখ্যাত অনেককে আটক করে ইসরায়েলের একটি বন্দরে নিয়ে গেছে তারা। ফ্লোটিলা ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় মোট নৌযান ছিল ৪৪টি।
ইসরায়েলের বাহিনী কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে সুমুদ ফ্লোটিলার নৌযানগুলো আটক করছে। কিছু আটক করা হয়েছে বুধবার। বাকিগুলো গতকাল বৃহস্পতিবার। গাজা থেকে ১২৯ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরে থাকা অবস্থায় বুধবার রাতে ফ্লোটিলায় প্রথমবারের মতো সরাসরি বাধা দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ) সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। বহরে প্রায় ৪৪টি নৌযানে ৫০০ মানুষ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের নাগরিকসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক রয়েছেন।
এই দলে রয়েছেন বাংলাদেশের অধিকারকর্মী ও সাংবাদিক শহিদুল আলম। সেখান থেকে তিনি একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করেছেন। তাতে দৃপ্ত শপথ উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, আমরা (গাজার বিরুদ্ধে) অবরোধ ভাঙব। ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে জিএসএফ জানায় যে, তাদের ৩০টি নৌকা এখনো “গাজার দিকে শক্তিশালীভাবে যাত্রা করছে” এবং নৌকাগুলো ওই সময় তাদের নির্ধারিত গন্তব্য থেকে ৪৬ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল।
তারা ইসরায়েলের এই বাধাদানকে ‘অবৈধ’ ও ‘প্রতিরক্ষামূলক কাজ নয়”, বরং “হতাশাজনক নির্লজ্জ কাজ” বলে বর্ণনা করেছে। দলটি অভিযোগ করেছে যে, ফ্লোটিলার মধ্যে থাকা একটি জাহাজকে “ইচ্ছাকৃতভাবে সমুদ্রে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে” এবং আরও কয়েকটি নৌকার দিকে জলকামান ব্যবহার করে আঘাত করা হয়েছে। এটি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে দখলদাররা গাজাকে ক্ষুধার্ত এবং বিচ্ছিন্ন রাখতে কতটা চরম পদক্ষেপ নেবে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা আটক করা অধিকারকর্মীদের দেশটির আশদোদ বন্দরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে তাদের ইউরোপে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তবে প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ওমের শাৎজ বলেছেন, আটক করা মানবাধিকার কর্মীদের সর্বোচ্চ কঠোর নিরাপত্তাসম্পন্ন কারাগারে রাখা হতে পারে। গাজার উদ্দেশে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রায় ৫০০ কর্মীকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের কেতসিওত কারাগারে রাখা হতে পারে। কেতসিওত একটি উচ্চ-নিরাপত্তার কারাগার, যেখানে সাধারণত ‘অভিবাসন’ আটককৃতদের রাখা হয় না।
‘নিরস্ত্র ও বেসামরিক’ অধিকারকর্মীদের ওপর ইসরায়েলের ‘ভীতি প্রদর্শন ও বলপ্রয়োগের’ ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। ‘কঠোর ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। সেই কারণেই সেখানকার মানুষের সুবিধার্থে খাবার এবং ওষুধ নিয়ে গ্রেটা-সহ অনেক সমাজকর্মী রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছোনোর আগেই তাঁরা বাধা পেলেন।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম লিখেছেন, মানবিক একটি অভিযানকে আটকে দিয়ে ইসরায়েল কেবল ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের প্রতি নয়; বরং বিশ্ববিবেকের প্রতিও চরম অবজ্ঞা দেখিয়েছে। এ নৌবহর অবরুদ্ধ থাকা মানুষদের সংহতি, সহানুভূতি ও ত্রাণের প্রত্যাশার প্রতীক।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরে থাকা দুজন কলম্বিয়ার নাগরিকসহ অধিকারকর্মীদের আটক করার ঘটনায় নিজ দেশ থেকে ইসরায়েলি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে বহিষ্কার করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। এক্সে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট লেখেন, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী) ‘নতুন আন্তর্জাতিক অপরাধের’ প্রতিক্রিয়ায় কলম্বিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি ‘অবিলম্বে বাতিল’ করা হবে।
গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি বাহিনীর বাধা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটি বলেছে, এ আক্রমণ প্রমাণ করে, গণহত্যাকারী নেতানিয়াহু সরকারের ফ্যাসিবাদী ও সামরিক নীতি, যারা গাজাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে; এখন আর কেবল ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
সমালোচনা করেছে ভেনিজুয়েলাও। টেলিগ্রাম অ্যাপে পোস্ট করা বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউভান গিল বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘একটি বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ অভিযানে আক্রমণ করেছে। অভিযানের একমাত্র উদ্দেশ্য ক্ষুধা আর নির্মূলের শিকার ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে ৫ হাজার ৫০০ টন মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলছে, ইসরায়েলের ফিলিস্তিন দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। সুতারং ফিলিস্তিনি জলসীমার ওপর ইসরায়েলের কোনো কর্তৃত্ব বা সার্বভৌমত্ব নেই।







