জৈন্তায় ৭ দিনের পশুর হাট শেষ হয়নি ৫ মাসেও
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ৮:২৯:৪৯ অপরাহ্ন
জৈন্তাপুর প্রতিনিধি: জৈন্তাপুর উপজেলার দু’টি পশুর হাট বিধি-বহির্ভূতভাবে পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ পশুর হাটগুলো বিগত কুরবানীর ঈদে সীমিত সময়ের জন্য অস্থায়ীভাবে সরকার ইজারা দিলেও এখন পর্য়ন্ত তা বহাল তবিয়তে পরিচালিত হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে চার মাস পার হলেও অস্থায়ী এই হাটগুলো এখনো একটি প্রভাবশালী মহল প্রশাসনের সাথে যোগসাজসে পরিচালনা করছে। এতে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব যেমন হারাচ্ছে, তেমনি পশু কারবারীরা বিভিন্নভাবে হযরানীর শিকার হচ্ছেন। হাটগুলো ভারতীয় অবৈধ পশু কেনাবেচার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এতে বৈধ হাটের কারবারীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তাই অবিলম্বে এই হাট দু’টিকে সরকারী নীতিমালায় এনে আইনি কাঠামোর মধ্যে বৈধভাবে পরিচালনার জোর দাবি উঠেছে। একই সাথে রাজস্ব আদায়কারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার দরবস্ত মৌজার ৫০১ নং দাগের আংশিক ভূমি ও চিকনাগুল বাজার পশুর হাট বিগত ঈদ উল আজহা উপলক্ষে অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা প্রদান সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জৈন্তাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। যার স্মারক নং ০৫.৪৬.৯১৫৩.০০০.৩২.০০১.১৯.৫২৩ তারিখ ২১ মে ২০২৫। শর্ত মোতাবেক পশুর হাট ১লা জুন ২০২৫ থেকে ৭ জুন ২০২৫ খ্রিঃ পর্যন্ত ১ সপ্তাহের জন্য ইজারা প্রদানের লক্ষে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। এরই আলোকে দু’টি বাজার ইজারা নিতে অংশগ্রহন করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্টান। পরবর্তিতে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দরবস্ত অস্থায়ী পশুর হাট ১ সপ্তাহের জন্য ইজারা গ্রহন করেন দরবস্ত এলাকার খরিলহাট মাদ্রাসার মহতামিম মৌলানা আবু হানিফ এবং চিকনাগুল বাজারের ইজারা গ্রহন করেন ইকবাল হোসেন যিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতে বাজার পরিচালনা করছেন চিকনাগুল ইউনিয়নের কহাইগড় ১ম খন্ডের বাসিন্দা মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে জহির উদ্দিন। অথচ এক সপ্তাহ পেরিয়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও কতিপয় অসাধু ব্যক্তি দু’টি পশুর হাট বসিয়ে প্রতিদিন অবৈধ রশিদের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে। অবৈধ হাট হওয়ায় প্রতিনিয়ত চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরু-মহিষ বেচা-কেনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা পশু গুলো এসকল বাজার থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধ রশিদের মাধ্যমে বৈধতা প্রদান করা হয়। এতে কোনটি বৈধ আর কোনটি চোরাই গরু তা বোঝার কোনো উপায় নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ হাটগুলোতে চোরাই গরু বিক্রি হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে স্থানীয় পশু কারবারিরা।
গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাও ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, এসকল বাজার মহাসড়কের সাথে যুক্ত থাকায় সহজে ভারতীয় গরু মহিষ বিক্রয় করা যায়, তাই আমরা এই বাজারে গরু বিক্রি করতে আসছি। তবে ইজারা না থাকায় এ বাজারটি বৈধ নয় বলে তিনি স্বীকার করেন। দরবস্ত বাজারের ইজারাদার মৌলানা আবু হানিফ বলেন, পশুর হাট এক সপ্তাহের জন্য ইজারা দেওয়া হলেও পরবর্তিতে পুনরায় নতুন করে পশুর হাট এক বছরের জন্য ইজারা আমাকে দেয়া হয়েছে। সকল ডকুমেন্ড আমার কাছে আছে। চিকনাগুল বাজার পশুর হাটের ইজারাদার জহির উদ্দিন বলেন, আমরা বেশ কয়েকজন মিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে পশুর হাট কোরবানির ঈদের সময় এক সপ্তাহের জন্য ইজারা নিয়ে ছিলাম। যেটি এখনো চলমান আছে এবং ইজারা সম্পর্কে প্রশাসন অবগত আছেন। এ ব্যাপারে দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার বলেন, দরবস্ত পশুর হাট থেকে ইজারাদার নিয়মিত যে ভাবে টাকা উত্তোলন করেন, তারা এখনো সেই ভাবে নিচ্ছে। যদি এই পশুর হাট এক সপ্তাহের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়ে থাকে এবং বর্তমানে যদি এটি অবৈধ হয় তাহলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে কিছু জানান নি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অস্থায়ী পশুর হাট কোরবানি উপলক্ষে এক সপ্তাহের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে, এখন চলমান থাকলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে এবং অবিলম্বে প্রশাসন কঠোর প্রদক্ষেপ গ্রহন করবে।