ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে পাওনা পরিশোধ ও সড়ক সংস্কারে গড়িমসির অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৩৩:০৪ অপরাহ্ন
মো. মুহিব হাসান, ওসমানীনগর থেকে: ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে আওয়ামীলীগ নেতার মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেড এর বিরুদ্ধে প্রকল্প নির্মাণে কাঁচামাল সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ না করা সহ প্রকল্পের মূল সড়ক সংস্কারে গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরবরাহকারীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেড এর ঊনিশমাইলস্থ কার্যালয় ইয়ার্ড এর প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন সরবরাহকারীরা। মাসের পর মাস তারিখ করেও টাকা পরিশোধ না করায় সরবরাহকারীদের অংশিদারদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে মহাসড়কের গোয়ালাবাজারের ভিতরে সড়ক সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পাথর ফেলে রেখে কার্পেটিং না করায় বৃষ্টির দিনে বাজার জুড়ে কাদা আর শুকনো দিনে মাত্রারিক্ত ধুলা বালি ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা পথচারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মহাসড়কে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এ বাজারের ভিতরের সড়ক সংস্কারে গড়িমসি করায় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ কর্মসূচীর ডাক দিবেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের পাতানো ডামি নির্বাচনে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ- সোনাইমুড়ী) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর তার ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকিদুর রহমান ভূঁইয়া রাকি সহ তিনি কানাডায় চলে যান। চেয়ারম্যান এমডি বিদেশে পালিয়ে গেলে তাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধ ও সড়ক সংস্কারে গড়িমসি করায় করিডোর সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা পাচারের প্রশ্ন তুলেছেন অভিজ্ঞমহল।
জানা যায়, ঢাকা-সিলেট কড়িডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে শেরপুর টোলপ্লাজা নামক স্থান থেকে কাশিকাপন বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪.১ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেড। ৪ বছর মেয়াদে ৮শ ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ সম্পন্ন এবং ৬ বছর মেয়াদে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রক্ষণাবেক্ষণের এই কাজ পায় প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে শুরু করা কাজ নিয়মমাফিক চললে ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা। কাজ শুরু করার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কাঁচামাল নেওয়ার চুক্তি শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী শেরপুরস্থ এ আর এন্ট্রারপ্রাইজ নামের একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বালু সরবরাহের কাজ পায়। তারা বালু দেওয়া শুরু করলে বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে যায়। এই পাওনা টাকা আদায় করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে লিখিতভাবে যোগাযোগ ও কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক বৈঠক করেন সরবরাহকারীরা। ২৩ সেপ্টেম্বর সরবরাহকারীরা একটি চূড়ান্ত নোটিশে জানিয়ে দেন, নির্ধারিত সময়ে বকেয়া পরিশোধ না হলে কোম্পানির ইয়ার্ড তালাবদ্ধ করা হবে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বকেয়া আদায়ের দাবীতে সরবরাহকারী এ আর এন্ট্রারপ্রাইজ এর লোকজন ঊনিশমাইল নামক স্থানে তমা কন্সট্রাকশন লিমিটেডের কার্যালয় কাম ইয়ার্ড এর প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়।
তাছাড়া করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করার পর সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মহাসড়কের সংস্কার কাজ করার কথা রয়েছে। কিন্তু মহাসড়কের গোয়ালাবাজারের ভিতরে একটি অংশে ডাবল ইট সলিং করলেও বেশির ভাগ অংশ বড় বড় গর্ত হয়ে খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এসব খানা খন্দ সংস্কারের নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকেরা বালি পাথরে সাদা সিমেন্ট মিশিয়ে গর্ত ভরাট করলে সমস্যার আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এসব খানা খন্দেও গর্তে বৃষ্টি দিলে পানি জমে থাকে এবং শুকনো দিনে মাত্রাতিরিক্ত সিমেন্ট মিশ্রিত বালির ধুলা উড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এলাকায় সীমাহীণ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে বাড়ছে জ¦র কাশিসহ নানাবিধ রোগ বালাই। বৃষ্টির হলে কাদা জল আর রোদ হলে সিমেন্ট মিশ্রিত ধুলা বালি উড়ার কারণে সীমাহীণ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাজারের ব্যবসায়ী, বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ক্রেতা, পথচারী ও যাত্রী সাধারণদের।
গোয়ালাবাজারের ব্যবসায়ী মো. মিলন মিয়া বলেন, আমরা মহাসড়ক লাগোয়া দোকানে ব্যবসা করি। সড়কে খানা খন্দ থাকায় একটু বৃষ্টি হলে কাদা জমে এবং রোদ উঠলে ধুলা উড়ে খুবই সমস্যা হচ্ছে।
সড়কে কাঁচামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক এমরান মিয়া বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনের কাছে আমাদের প্রায় ১কোটি ৩০ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা বার বার যোগাযোগ করে লিখিত নোটিশ প্রদান করেও টাকা আদায় করতে পারছি না। মোটা দাগের পাওনা টাকায় ব্যাংকে আমাদের বড় অংকের সুদ গুনতে হচ্ছে। উপায় না পেয়ে আমরা তাদের কার্যালয় ইয়ার্ডে তালা দিয়েছি।
তমা কন্সট্রাকশনের প্রকল্প ম্যানেজার উদয়ন চক্রবর্ত্তী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, এমডি দেশের বাহিরে রয়েছেন। বর্তমানে কিছুটা আর্থিক সমস্যা হচ্ছে, তাই সরবরাহকারীদের টাকা দিতে পারছি না। সমস্যা থাকবে না, টাকা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। গোয়ালাবাজারের ভিতরে সংস্কার কাজ বৃষ্টির জন্য করা যাচ্ছেনা। শুকনো সময় আসলেই ১৫/২০ দিনের মধ্যে কাজ করে দেওয়া হবে।