সিলেট-সুলতানপুর সড়ক : অস্বাভাবিক ‘স্পিড ব্রেকার’, অসহায় সওজ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ৪:০১:০২ অপরাহ্ন
৭ কিলোমিটারে ১৩টি, দুর্ঘটনার ঝুঁকি

স্টাফ রিপোর্টার : সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) আওতাধীন সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কে স্থানীয়দের দেওয়া ইচ্ছেমতো স্পিড ব্রেকার যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সিলাম জামে মসজিদ থেকে আজমতপুর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৩টি ‘স্পিড ব্রেকার’ দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। ঘন ঘন এসব স্পিড ব্রেকারে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করেছে। এছাড়া নতুন সংস্কারকৃত দৃষ্টিনন্দন এ সড়কটি সৌন্দর্যও হারিয়েছে। তবে এটি নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে সওজ।
সড়কে নিয়মিত চলাচলকারীরা বলছেন, অপরিকল্পিত ঘন ঘন স্পিড ব্রেকার দুর্ঘটনা ঝুঁকি বাড়িয়েছে সিলেট-সুলতানপুর সড়কে। দূর থেকে দেখা যায় না এগুলো । ফলে গতি থাকা অবস্থায় এসব স্পিড ব্রেকার অতিক্রম করে যানবাহন। এতে যাত্রীরা সজোরে ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠেন। প্রায় সময়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে এ সড়কে।
চালকরা বলছেন, স্পিড ব্রেকরের সামনে সতর্কমূলক সাইনবোর্ড নেই। সতর্কমূলক সাইনবোর্ড দেওয়া থাকলে চালকরা আগেবাগেই গতি কমিয়ে নেন। ফলে ধীরগতিতে স্পিড ব্রেকার পার হয় যানবাহন। তারা বলেন, ৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৩টি স্পিড ব্রেকার অস্বাভাবিক। সওজের সড়কে স্থানীয়রা কোনোভাবে স্পিড ব্রেকার তৈরি করতে পারেন না। এসব স্পিড ব্রেকার দ্রুত অপসারণ করা জরুরী।
সওজ বলছে, সড়কে এসব স্পিড ব্রেকার দেওয়ার এখতিয়ার নেই এলাকাবাসীর। সওজ এসব অপসারণ করতে গেলে এলাকার লোকজন মারতে আসে। ফলে এগুলো অপসারণ করা যাচ্ছে না।
সওজের তথ্য বলছে, সিলেট (চন্ডীপুল)-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের দৈর্ঘ্য ২৫.৪৫ কিলোমিটার। তবে এই সড়কে সওজের কোনো স্পিড ব্রেকার নেই। জানা গেছে, ২৫.৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়কে মূলত সিলাম জামে মসজিদ থেকে আজমতপুর পর্যন্ত সড়কে স্পিড ব্রেকার রয়েছে। আর এসব স্পিড ব্রেকার দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। যদিও সওজের সড়কে স্থানীয়দের এভাবে স্পিড ব্রেকার দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চন্ডীপুল থেকে সিলাম জামে মসজিদ ৪ কিলোমিটার সড়কে কোনো স্পিড ব্রেকার নেই। যে স্পিড ব্রেকার দেখা যাচ্ছে এর সবগুলো মূলত সিলাম জামে মসজিদ থেকে আজমতপুর পর্যন্ত। এছাড়া আজমতপুর থেকে বালাগঞ্জ পর্যন্ত সড়কে কোনো স্পিড ব্রেকার নেই। ১৩টি স্পিড ব্রেকারের মধ্যে সিলাম জামে মসজিদের সামনে ২টি, চকের বাজার স্কুলের সামনে ২টি, নিজ সিলাম পয়েন্ট ১টি, সিলাম নয়া বাজার ১টি, কলারতল ৩টি, বটেরতল ১টি, জালালপুর বাজারে ২টি ও আজমতপুর ১টি। স্পিড ব্রেকারের কারণে মূলত এই ৭ কিলোমিটার সড়কই যেন মরণফাঁদ। সড়কে এসব স্পিড ব্রেকার তৈরি করেছেন সংশ্লিষ্ট গ্রামের লোকজন। ফলে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।
জানা গেছে, এসব স্পিড ব্রেকার অপসারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগও অসহায়। দক্ষিণ সুরমা উপজেলার এই ৭ কিলোমিটার এলাকার লোকজনের মারমুখী আচরণে এসব স্পিড ব্রেকার অপসারণ করা যাচ্ছে না।
সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী সালমান আহমদ জালালাবাদকে বলেন, ৭ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩ স্পিড ব্রেকার এ যেন মরণফাঁদ। সিএনজি ও বাইক প্রতিনিয়ত ছোটখাটো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। দ্রুত এসব স্পিড ব্রেকার অপসারণ করা না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে সওজের সিলেট সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির উদ্দিন জালালাবাদকে বলেন, এই সড়কে পারলে সবাই বাড়ির সামনে স্পিড ব্রেকার দিতে চায়। সওজের কর্মকর্তারা স্পিড ব্রেকার অপসারণ করতে গেলে তাদের মারতে আসে স্থানীয় লোকজন। তিনি বলেন, সওজ ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই সড়কে বাঁক দিতে পারে না। এটা অবৈধ কাজ। সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে স্পিড ব্রেকারগুলো অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।