দ্রুতই দেশে ফিরব, নির্বাচনে অংশ নেব – ১৭ বছর পর গণমাধ্যমে তারেক রহমানে সাক্ষাৎকার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ৯:২৪:৩১ অপরাহ্ন

জালালাবাদ রিপোর্ট : ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন তারেক রহমান। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কেন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি, দেশে কবে ফিরছেন, বিবিসি বাংলার এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।
তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কাদির কল্লোল। সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব গতকাল সোমবার সকালে প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এর দৈর্ঘ্য ৪৪ মিনিটের বেশি। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করা হবে আজ মঙ্গলবার।
দীর্ঘ সময় কেন কথা বলেননি
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানের কাছে বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি এই দীর্ঘ সময় কথা বলেননি কেন?
এর উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাপারটা বোধ হয় এ রকম নয়, ব্যাপারটা বোধ হয় একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে আছি, এই দেশে, প্রবাসজীবনে, তবে আমার ওপরে যখন দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে, তার পর থেকে আমি গ্রামেগঞ্জে আমার নেতা-কর্মীসহ তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষ যখন যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি।
তারেক রহমান বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময় আদালত থেকে রীতিমতো একটা আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারত না।
এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, তিনি একবার প্রেসক্লাবে কথা বলেছিলেন। পরের দিন প্রেসক্লাবের তখনকার কমিটি একটি বৈঠক ডেকে একটি সিদ্ধান্ত নেয়। তারা তখন তাঁকে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি উল্লেখ করে বলেছিল, এ রকম কোনো ব্যক্তিকে তারা প্রেসক্লাবে কথা বলতে দেবে না। এভাবে তাঁর কথা বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল।
দেশে কবে ফিরবেন :
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। তাঁর কাছে বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, কেন তিনি এখনো দেশে ফেরেননি?
এর জবাবে তারেক রহমান বলেন, কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে ওঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশা আল্লাহ, দ্রুতই ফিরে আসব। কবে ফিরতে পারেন, জানতে চাইলে তারেক রহমান বলেন, দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই, ইনশা আল্লাহ। আগামী নির্বাচনের আগে দেশে ফিরবেন, এমন সম্ভাবনার কথা বলা যায় কি না-বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্ন করে।
তারেক রহমান উত্তরে বলেন, রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নির্বাচনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে জনগণের প্রত্যাশিত একটি নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব? আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সঙ্গে জনগণের মধ্যেই থাকব, ইনশা আল্লাহ।
বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময়ে তারেক রহমানের দেশে না ফেরার পেছনে নিরাপত্তাশঙ্কার কথা বলেছেন। তিনি কোনো ধরনের শঙ্কাবোধ করেন কি না, সেটি তাঁর কাছে জানতে চায় বিবিসি বাংলা।
উত্তরে তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তো শুনেছি। সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে বিএনপির কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতা তারেক রহমানকে এই আন্দোলনের ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে তারেক রহমানের কাছে বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, তিনি নিজেকে এই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে দেখেন কি না?
উত্তরে তারেক রহমান বলেছেন, না, আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই আন্দোলন সফল হয়েছে জুলাই মাসে, কিন্তু এর প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে। আমি মনে করি, জুলাই-আগস্ট মাসে (২০২৪ সাল) এসে জনগণ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে।







