৯ মাসে সিলেট বিভাগের সীমান্তে ৬ বাংলাদেশিকে হত্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ৮:৩৫:৫৩ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা বেড়েই চলছে। গত নয় মাসে সিলেট বিভাগের চার জেলার সীমান্ত এলাকায় ৬ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় নাগরিকরা। অপরদিকে গত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্য সীমান্ত এলাকায় আরও ২৬জন বাংলাদেশি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদও জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবুও সীমান্তে হত্যা কোনোভাবে কমে আসছে না।
যদিও প্রতি বছরই বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। সর্বশেষ গত ২৫-২৮ আগস্ট রাজধানী ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সম্মেলনে সীমান্তে হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির একদিন পরই সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তে হত্যাকান্ডের শিকার হন এক বাংলাদেশি। ফলে বিএসএফের প্রতিশ্রুতি কেবল আশ^াসেই থেকে যায় প্রতিবারই।
বিজিবি বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবুও সীমান্তে চোরকারবারী ও মাদক পাচারকারীদের দৌরাত্ম থামছে না। বিজিবি বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্তের আন্তর্জাতিক শুন্য রেখা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে। বিজিবির কর্মকর্তারা জানান, সীমান্তে কোনো হত্যাই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে বিএসএফকে সবসময় কড়া প্রতিবাদ জানায় বিজিবি।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সিলেট জেলার কানাইঘাট সীমান্তে ১জন, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সীমান্তে ২জন, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট সীমান্তে ১জন ও সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার ও বিশ^ম্ভরপুর সীমান্তে ২জন বাংলাদেশি বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন।
তথ্য মতে, চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দশটেকি (নতুন বস্তি) এওলাছড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় আহাদ আলী নামের এক বাংলাদেশি সীমান্তে হত্যাকান্ডের শিকার হন। আন্তর্জাতিক সীমানা রেখার ৫ গজ ভেতরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। তবে আহাদ আলীকে ভারতীয় নাগরিক হায়দার আলী ও তার সহযোগীরা মিলে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে তার লাশ সীমান্তের ভেতরে ফেলে পালিয়ে যায় ভারতীয় নাগরিকরা।
গত ৩১ মে একই উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের দত্তগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে প্রদীপ বৈদ্য (২২) নামের এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হন। নিহত প্রদীপ দত্তগ্রামের বাসিন্দা শৈলেন্দ্র বৈদ্যর ছেলে। কুলাউড়ার দত্তগ্রাম সীমান্তের বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য অবস্থিত। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিহতের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত আরও তথ্য বলছে, গত ২৯ আগস্ট সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তে ভারতীয় অংশে বাংলাদেশি যুবক আব্দুর রহমানকে (৪০) গুলি করে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। সীমান্তের ১৩৩৯ নম্বর পিলারের কাছে গুলিতে তিনি মারা যান। নিহত আব্দুর রহমান (৪০) কানাইঘাট উপজেলার আটগ্রাম বড়চাতল (বাকুরি) গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আব্দুর রহমানের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
অপরদিকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে সাইদুল ইসলাম (২৩) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হন। নিহত সাইদুল ইসলাম উপজেলার গামাইতলা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে। সাইদুল ইসলাম সীমান্ত এলাকায় নিজের গরু আনতে গেলে নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছাকাছি পৌঁছান। তখন বিএসএফ গুলি চালায়। গুলির শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে সাইদুলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে বিশ্বম্ভরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গত ১১ জুলাই একই জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাগানবাড়ি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের এক বাংলাদেশি নিহত হন। তিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনিও সীমান্তে গরু আনতে গিয়ে নিহত হন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে উঠে এসেছে।
এদিকে সিলেট বিভাগের আরেক জেলা হবিগঞ্জেও বিএসএফের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। গত ৬ জানুয়ারি চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকায় জহুর আলী (৫৫) নামের ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে বিএসএফ। তিনি চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম ডুলনা গ্রামের বাসিন্দা। জহুর আলীকে হত্যা করে মরদেহ বিএসএফ ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুই দিন পর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাঁর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিজিবি সিলেট সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন লিখে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।







