চলে গেলেন দেশখ্যাত স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল : প্রধান উপদেষ্টা, জামায়াত আমীরসহ বিশিষ্টজনের শোক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ৯:২৮:৩৯ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের জামাতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল সরোয়ার জাহান বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার হার্টে ব্লক ছিল, ফুসফুসেও সমস্যা ছিল। হার্টে রিং পরার জন্য হসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। বিকেলে তার হৃদযন্ত্রে রিং পরানোর জন্য অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচার চলার মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ফতেহপুর গ্রামে বেলা ১১ টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তোফায়েল আহমেদকে দাফন করা হয় বলে সরোয়ার জাহান জানিয়েছেন।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস, জামায়াতে ইসলামীর আমীরসহ বিশিষ্টজনেরা।অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিকাশ ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও এক মেয়েসহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
১৯৫৪ সালের ১ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুরে জন্ম তোফায়েল আহমেদের। তোফায়েল আহমেদ ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি সোয়ানসির ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধ্যয়নে এমএসসি (অর্থনীতি) ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড/কুমিল্লা), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিআইজিডি (ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
২০০৬-০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হলে স্থানীয় সরকার কমিশনের সদস্য ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। এরপর স্থানীয় শাসন উপদেষ্টা হিসেবে ২০০৯ থেকে ছয় বছর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে কাজ করেন।
এছাড়া ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষে কর্মরত ছিলেন।তিনি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে অনুষদ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির স্থানীয় শাসন উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানও ছিলেন দেশখ্যাত এ স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ।
প্রধান উপদেষ্টার শোক :
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণার অন্যতম অগ্রদূত। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার উন্নয়নে গঠনমূলক ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন, যা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ স্থানীয় সরকার ও সমবায় বিষয়ক একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ গবেষক ও লেখক। তিনি সারা জীবন দেশের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত ছিলেন।
ড. ইউনূস বলেন, স্থানীয় সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে তার রচিত প্রায় ২০টি গ্রন্থ ও দেশি-বিদেশি জার্নাল ও পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত অসংখ্য প্রবন্ধ, যা যুগের পর যুগ ধরে আমাদের জ্ঞানচর্চাকে সমৃদ্ধ করবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক অধ্যাপক জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে (বাংলাদেশ) স্থানীয় শাসন উপদেষ্টা হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন সৎ, প্রজ্ঞাবান ও নিবেদিতপ্রাণ গবেষককে হারালো।’
প্রধান উপদেষ্টা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
জামায়াত আমীরের শোক :
বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় জামায়াত আমীর বলেন, অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ সুনাম ও স্বচ্ছতার সঙ্গে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনাকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য তিনি অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। এ ব্যাপারে তাঁর গবেষণা এবং তাঁর সুপারিশ আগামীতে যদি দেশ এবং সরকার বিবেচনায় নেয়, তাহলে জাতি উপকৃত হবে বলে আমরা মনে করি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রতি রহম করুন, তাঁকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার, প্রিয়জন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁদেরকে উত্তম ধৈর্য ধারণের তাওফিক দান করুন। আমীন।