ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ৯:১৯:৫০ অপরাহ্ন
♦ উত্তাল রাজপথ, ১৫ দিনের আল্টিমেটাম
♦ আজ ১২টায় হুমায়ূন চত্বরে গণ-অবস্থান

স্টাফ রিপোর্টার : ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এবং সীমাহীন বৈষম্যের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছে সিলেট। অবস্থান কর্মসূচী, মিছিল-শ্লোগান, স্মারকলিপি প্রদান এবং দোকানপাট বন্ধ রেখে রোববার উত্তাল ছিল সিলেটের রাজপথ। আজও গণ-অবস্থান কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে।
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বেহাল দশা, কাজে ধীরগতি, সংস্কারের নামে টালবাহানা, ভঙ্গুর রেলপথ, আকাশছোঁয়া বিমান ভাড়া, বিদ্যুতর বিপর্যয় ইত্যাদি নানান সমস্যার প্রতিবাদে দলমত নির্বিশেষে সবাই রাস্তায় নেমে আসেন। বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ প্রতিবাদমুখর সিলেটবাসী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রোববার সকালে ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টে উপস্থিত হয়ে সিলেটের প্রতি দীর্ঘদিনের বৈষম্যের প্রতিবাদ জানান।
এখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। পরে দুপুর ১২টার পর সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের কাছে বিভিন্ন দাবি-সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন সিলেটবাসী। এরআগে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যের শিকার সিলেটবাসীকে রোববারের প্রতিবাদ কর্মসূচীর ডাক দেন আরিফুল হক। তার এই আহবানে সাড়াদিয়ে ব্যবসায়ীরা একঘণ্টার জন্য দোকান ও মার্কেট বন্ধ রাখেন। শত শত মানুষ জড়ো হন কোর্ট পয়েন্টে। এছাড়া দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন পরে আলাদাভাবে অভিন্ন দাবিতে প্রতিবাদ, মনববন্ধন ও সমাবেশ করে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দ্রæত সংস্কারসহ আট দাবিতে এই সময়ে সিলেট নগরে প্রতীকী অনশন ও কর্মবিরতি পালন করা হয়।
সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া দাবিগুলো হলো- ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংস্কার কাজ দ্রæত সম্পন্ন করা। সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন ও বগি চালু করা। রেল টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা। সিলেট-ঢাকা রুটে বিমানের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে আনা। সিলেটের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার দ্রæত উন্নয়ন ও টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সংস্কার কাজ দ্রæত সম্পন্নের দাবিতে সোমবার দুপুর ১২টায় দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বরে ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সূচনাস্থলের দুই পাশে গণ-অবস্থান ও মানববন্ধন’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এদিকে সকালে কোর্ট পয়েন্টের সমাবেশে বক্তব্যে আরিফুল হক বলেন বলেন, মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সিলেটবাসী। সিলেটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতের ন্যায্য প্রাপ্যতা আজও নিশ্চিত হয়নি। রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্তে¡ও সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি অর্থাৎ নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলোর ন্যায্য অধিকার থেকে সিলেটবাসী বারবার বঞ্চিত হচ্ছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন সমগ্র সিলেটের সড়ক ব্যবস্থা অসহনীয়ভাবে হুমকির মুখে। সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ থমকে আছে। শুধু মহাসড়ক নয়, সিলেট শহরের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোরও বেহাল অবস্থা। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে সিলেটে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে আম্বরখানা সড়কের তীব্র যানজট সিলেটবাসী সম্পর্কে বহিরাগতদের প্রত্যাশা অনেকাংশে ¤øান করে দেয়। তাছাড়া, বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তারও বেহাল দশা।
স্মারকলিপি প্রদান: পরে কোর্ট পয়েন্ট থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিতে মিছিল সহকারে যান প্রতিবাদকারীরা।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে আরিফুল হক জানান আমরা আমাদের দাবিগুলো জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের কাছে দিয়েছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো পূরণে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়, তা জানাতে হবে। যদি ১৫ দিনের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত। গত ৫-৭ বছর যাবৎ যোগাযোগ খাতে তেমন কোনো কাজ হয়নি, এজন্য মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বেহাল দশা। তবে আমি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি, কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ বিমানের সকালে-বিকালে ভাড়ার তারতম্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে শিগগির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসবো। পাশাপাশি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দুর্ভোগ লাঘবে অন্তত একটি বিশেষ েেট্রন চালু করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
এক ঘন্টার অচল সিলেট:
সিলেটের সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ভোগান্তির প্রতিবাদে রোববার এক ঘন্টার জন্য প্রায় অচল হয়ে পড়ে সিলেট নগর। সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল নগরের বেশিরভাগ দোকানপাট ও বিপনীবিতান, যান চলাচলও ছিল সীমিত।
সকালে নগর ঘুরে দেখা গেছে, নগরের বেশিরভাগ বিপনীবিতানের ফটক বন্ধ। দোকানপাটেরও সাটার লাগানো। নগরে রিকশা ছাড়া অন্যান্য যান চালাচলও প্রায় বন্ধ ছিল। তবে ১২ টার পর থেকে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়।
উল্লেখ্য, যোগাযোগ ক্ষেত্রে সিলেটের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতের কাজ আটকে আছে। ফলে ভাঙাচোরা সড়কে প্রতিনিয়ত লেগে থাকছে দীর্ঘ যানজট। এছাড়া জারাজীর্ণ রেললাইন এবং ট্রেন ও টিকিট সংকট ও বর্ধিত বিমান ভাড়ার কারণেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের মানুষদের। অনেক লেখালেখি ও আলাপ আলোচনার পরও কোনো ভ্রক্ষেপ হচ্ছিল না কর্তৃপক্ষের। অবশেষে নিজেদের অধিকার আদায়ে রাজ পথে নামতে হলো সিলেটবাসীকে।







