বিশ্বজুড়ে তরুণদের মৃত্যুহার বাড়ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৫:৩২:৪৮ অপরাহ্ন
মাদক, আত্মহত্যা, রোগব্যাধি

জালালাবাদ ডেস্ক : স¤প্রতি প্রকাশিত ‘গেøাবাল বার্ডেন অব ডিজিজ’ গবেষণায় বিশ্বজুড়ে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মৃত্যুহার বৃদ্ধির একটি ‘উদীয়মান সংকট’ দেখা দিয়েছে বলে সতর্ক করেছে গবেষকরা। ১৬ হাজার ৫০০ বিজ্ঞানী গবেষণাটি ৩ লাখেরও বেশি ডেটা উৎস ব্যবহার করে পরিচালনা করেছেন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, উত্তর আমেরিকায় মাদক ও অ্যালকোহল ব্যবহারের পাশাপাশি আত্মহত্যার প্রবণতা এই মৃত্যুহার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। অন্যদিকে, সাব-সাহারান আফ্রিকায় সংক্রামক রোগ, আঘাত এবং মাতৃমৃত্যু এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী। এতে দেখা যায়, বিভিন্ন অঞ্চলে এই বৃদ্ধির পেছনে ভিন্ন ভিন্ন কারণ কাজ করছে।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলো এখন দুই-তৃতীয়াংশ অসুস্থতার কারণ। একই সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রকোপও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ।
তবে, একটি ইতিবাচক দিক হলো, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলে সামগ্রিকভাবে মৃত্যুহার কমেছে এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গড় আয়ুর হ্রাস কাটিয়ে উঠেছে। বর্তমানে নারীদের গড় আয়ু ৭৬.৩ বছর এবং পুরুষদের ৭১.৫ বছর, যা ১৯৫০ সালের তুলনায় ২০ বছরেরও বেশি।
যদিও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে জীবন প্রত্যাশা যেখানে ৮৩ বছর, সেখানে সাব-সাহারান আফ্রিকায় তা মাত্র ৬২ বছর—এই ক্ষেত্রে ‘স্পষ্ট ভৌগোলিক পার্থক্য’ রয়ে গেছে।
কারণ অনুসন্ধানে নানা বিতর্ক :
কিশোর ও তরুণদের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ বা ক্রমবর্ধমান মৃত্যুহার নিয়ে গবেষকরা বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের স্কুল অব মেডিসিনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)-এর পরিচালক ড. ক্রিস্টোফার ম্যুরে বলেন, তরুণদের, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার নারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু ‘তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষন্নতার বৃদ্ধির সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত’।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধির বৃদ্ধির পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেকট্রনিক ডিভাইস নাকি অভিভাবকত্বের বিস্তৃত সামাজিক প্রবণতা কাজ করছে, তা নিয়ে এখনো অনেক বিতর্ক রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি এটিকে আরও খারাপ করেছে বলেও তিনি মনে করেন।
সাব-সাহারান আফ্রিকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। নতুন মডেলিং ডেটা অনুযায়ী, ১৯৫০ সাল থেকে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার আগের ধারণার চেয়ে বেশি ছিল, যার প্রধান কারণ সংক্রামক রোগ।
১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী কিশোরী ও নারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার আগের অনুমানের চেয়ে ৬১ শতাংশ বেশি ছিল। এর প্রধান কারণ ছিল গর্ভাবস্থা বা প্রসবকালীন মৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা এবং মেনিনজাইটিস।
ড. ম্যুরে বলেন, ‘গেøাবাল বার্ডেন অব ডিজিজ গবেষণায় উপস্থাপিত প্রমাণ একটি ‘সতর্কবার্তা’। এটি সরকার এবং স্বাস্থ্যসেবা নেতাদের জনস্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা পুনর্গঠনকারী উদ্বেগজনক প্রবণতাগুলোর প্রতি দ্রæত এবং কৌশলগতভাবে সাড়া দেওয়ার আহŸান জানাচ্ছে।’
দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব :
অ্যামরেফ হেলথ আফ্রিকা-এর প্রধান নির্বাহী ড. গিথিনজি গিতাহি বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অসংক্রামক রোগ এবং সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব, এবং জলবায়ু পরিবর্তন-এই ত্রিমুখী বোঝার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম এবং সমন্বিত পরিচর্যা এর মূল চাবিকাঠি।’
ড. গিতাহি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবার খÐ খÐ পদ্ধতি আমাদের তরুণদের ব্যর্থ করছে। দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, ব্যাহত পরিচর্যা এবং ভ্যাকসিনের ঘাটতির কারণে ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এবং য²ার মতো রোগ এখনও অনেক তরুণ প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।
একই সময়ে, তরুণ আফ্রিকানদের মধ্যে অসংক্রামক রোগের ব্যাপক বৃদ্ধি কেবল ভবিষ্যতের হুমকি নয়; তারা এখনই তরুণদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে। খাদ্যের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে খুব কমই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং জীবনধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনকারী শহুরে পরিবেশে পুষ্টি শিক্ষারও অভাব রয়েছে। তিনি ‘প্রকৃত তরুণকেন্দ্রিক জনস্বাস্থ্য বিনিয়োগের ভিত্তিতে শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার’ আহŸান জানান।
সিনিয়র লেখক এবং আইএইচএমই-এর অধ্যাপক এমানুয়েলা গাকিদু সতর্ক করে বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য কমানোর কারণে নি¤œ আয়ের দেশগুলোতে বিদ্যমান অগ্রগতি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘এই দেশগুলো জীবন রক্ষাকারী প্রাথমিক পরিচর্যা, ওষুধ এবং ভ্যাকসিনের জন্য বৈশ্বিক স্বাস্থ্য তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। এটি ছাড়া ব্যবধান আরও বাড়তে বাধ্য।







