এইচএসসি’র সুষ্ঠু ধারায় প্রত্যাবর্তন!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০:৫৫ অপরাহ্ন

সম্প্রতি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় ঘটেছে। এ নিয়ে ‘২০ বছরের ইতিহাসে এইচএসসিতে সর্বনি¤œ ফল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় মিডিয়ায়। এতে বলা হয়েছে, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। এ বছর ১১টি শিক্ষাবোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর চেয়ে কম পাসের হার ছিলো ২০০৪ সালে। ওই বছর এইচএসসিতে পাস করেছিলেন ৪৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। এরপর এইচএসসিতে পাসের হার আর কখনো এর চেয়ে নীচে নামেনি। সেই হিসাবে ২০ বছরের মধ্যে এবারই পাসের হার সবচেয়ে কম। এদিকে সিলেট বিভাগে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এছাড়া সিলেট বোর্ডে ৪টি কলেজে কেউ পাস করতে পারেনি। সিলেট বোর্ডে ফলাফল বিপর্যয় নিয়ে অনেক শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক বলছেন, উত্তরপত্র মূল্যায়নের নির্দেশনায় দুর্বলতা, প্রশিক্ষণবিহীন পরীক্ষক দ্বারা উত্তরপত্র মূল্যায়ন, নিবন্ধনধারী শিক্ষকের অভাব, শিক্ষার্থীদের ইংরেজী ভীতির কারণে এমন ফলাফল এসেছে। এদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে ইংরেজী ও আইসিটি বিষয়ে পাসের হার কম হওয়াকে দায়ী করেছেন। দেখা গেছে, এবারের পরীক্ষায় ইংরেজী বিষয়ে পাসের হার ৬৪ দশমিক ৫৩ ভাগ। গত বছর ছিলো শতভাগ। আর আইসিটিতে এবার পাসের হার ৮০.৮৭ শতাংশ। গত বছর ছিলো ৮৭.৭৮ শতাংশ।
অনেকের মতে, এবার দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডে ফলাফল বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড়ো কারণ হচ্ছে মেধার মূল্যায়নে এবার ওভারমার্কিং করা হয়নি। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এইচএসসি ফলাফল প্রকাশের পর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে উদ্বেগ উঠেছিলো, আমি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছি। আমি সকল শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছি, যেনো ভবিষ্যতের পরীক্ষাসমূহে বিশেষভাবে এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়নে সীমান্তরেখায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতি সর্বোচ্চ ন্যায্যতা বজায় রাখা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে যেনো ফলাফলের বাস্তবতা বিকৃত না হয়। আমরা অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে সন্তুষ্ট হতে চাইনে বরং ন্যায্য নম্বর দিয়ে সততা বজায় রাখার পন্থা বেছে নিয়েছি। এই সিদ্ধান্ত সহজ নয়। কিন্তু প্রয়োজনীয়। কারণ আজ যদি আমরা সাহস করে বাস্তবতা স্বীকার না করি, তাহলে মেধাবীদের প্রতি ও আগামী প্রজন্মের প্রতি অন্যায় করা হবে।
লক্ষণীয় যে, ২০২০ সালে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে সে বছর ফরম পূরণ করা সব শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেয়া হয়, যেটাকে অটোপাস বলা হয়। এরপর কয়েক বছর করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, কখনো ৪ বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। সবশেষে ২০২৪ সালে পূর্ণ নম্বর, পূর্ণ সিলেবাস ও পূর্ণ সময়ে ফিরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কিন্তু কয়েকটি পরীক্ষা হওয়ার পর শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। এতে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পাঁচ বছর পর এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে। এজন্য ফলাফল নিম্নমুখী। একই সঙ্গে অতিরঞ্জিত ফল এড়াতে গ্রেস মার্কস দেওয়া পরিহার করার নীতিও প্রভাব ফেলেছে ফলাফলে।
তবে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক ধারায় পরীক্ষা ফিরলেও স্বাভাবিক প্রস্তুতি কেনো শিক্ষার্থীদের নেওয়া সম্ভব হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। পাঠদানের ধরনেও সেই স্বাভাবিক ধারা আনার ক্ষেত্রে কোন গলদ রয়েছে কি-না, তা দেখতে হবে। আমরা সিলেট বোর্ডসহ দেশের শিক্ষাবোর্ড সমূহের এইচএসসি পরীক্ষায় এ ধরনের ছন্দ পতন তথা বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান ও এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে সরকারের শীর্ষ মহলের প্রতি। আশা করি, তারা অবিলম্বে এ বিষয়ে নজর দেবেন।





