জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর : অংশ নিলো বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫ দল
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৫:৪৬ অপরাহ্ন
নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো : ড. ইউনূস

জালালাবাদ রিপোর্ট : দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরিত হল।
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে স্বাক্ষর করেছেন।
শুক্রবার বিকেল ৫টায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ স্বাক্ষর করেন তাঁরা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরাও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ বিভিন্ন দলের নেতারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি।
এদিকে, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একইসঙ্গে তিনি এই সনদ স্বাক্ষরকে অভ্যুত্থানের ‘দ্বিতীয় অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং অভ্যুত্থান সফলের পেছনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ড. ইউনূস বলেন, আজ যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হলো, এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবর্তন হবে। এর মাধ্যমে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এমন সভ্য হবো যে, মানুষ আমাদের দেখে ঈর্ষান্বিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনে যাব। যারা স্বাক্ষর করলেন, তারা প্রয়োজনে আবার বসেন। ঠিক করেন কীভাবে নির্বাচন সুন্দর করা যায়। যেনতেন নির্বাচন করে কোনও লাভ নেই।
এর আগে বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে যোগ দেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের ক‚টনীতিকেরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
অংশ নিলো ২৫ দল :
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং যে ২৫টি দলের নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতসহ সেই দলগুলো হলো- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির। খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন। আমার বাংলাদেশ পাটির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি মিসেস তানিয়া রব। গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান। ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও গাজীপুর জেলা ছাত্র ফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ। জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার। বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়্যারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম। ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী। আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, খুব ভালো সনদ হতে যাচ্ছে। এখানে কিছু কিছু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) আছে। এখন এই নোট অব ডিসেন্টগুলো কেমন করে আমরা মিনিমাইজ করব, যারা আজকে স্বাক্ষর করছেন না, তারা কেমন করে সম্পৃক্ত হবেন-ভবিষ্যতে সেটা নিয়ে কাজ করব।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে, কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সেই অভীষ্ট জায়গা গণতন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রত্যাশা জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে, যেন আমরা বলতে পারি যে আমাদের অনেক স্রোত, কিন্তু মোহনা একটি।
আইনজীবী ও জামায়াত নেতা শিশির মনির বলেন, জুলাই যোদ্ধারা তিনটি দাবি উত্থাপন করেছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি, কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। কমিশন অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তাদের দাবি মেনে নিয়ে ইতিমধ্যে জুলাই সনদে পরিবর্তন করেছে। তাদের আর কোনো উদ্বেগ থাকার কথা নয়।
ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বেলা ২টার দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সংশোধনের কথা জানানো হয়।
এদিকে, কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এ মন্তব্য করেন।





