পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে খুন : স্বামী আটক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৮:৫৭:১৭ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : পরকিয়া সম্পর্কের জের ধরে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে জিয়ারতের কথা বলে সিলেটে এনে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগে স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। আটক স্বামী হলেন- সুনামগঞ্জ সদর থানার রঙ্গারচর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ওমান ফেরত ফারুক আহমেদ। শনিবার সিলেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
এসএমপি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর বিকেলে লাক্কাতুরা চা বাগানের ভাইগণ নামক টিলার উপরে নির্জন ও ঝোপঝাড়ে এক অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহটি আংশিক পচনধরা অবস্থায় ছিল। প্রাথমিকভাবে ওই নারীর বয়স প্রায় ২৫ বছর অনুমান করা হয়। পরনে নতুন লাল রঙের জমিন ছাপা শাড়ী, হালকা গোলাপি রঙের বোরকা এবং গলায় হলুদ রঙের ওড়না পেঁচানো ছিল। মৃতদেহের পাশেই পাওয়া যায় একটি লেডিস হ্যান্ডব্যাগ, যার ভিতরে ছিল কয়েকটি জামাকাপড় এবং ব্যাগের পকেটে একটি ছোট মোবাইল মেমোরি কার্ড।
পিবিআই ও সিআইডি কর্তৃক আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হলেও, আঙ্গুলে পচন ধরায় নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে মেমোরি কার্ডে থাকা রেকর্ডকৃত মোবাইলের কথোপকথনের অডিও তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং সংশ্লিষ্ট নম্বরের সিডিআর সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে পুলিশ মৃত নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
নিহত নারী হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার মওলারপাড় গ্রামের মৃত মাহতাব মিয়ার কন্যা রাবেয়া বেগম। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্তে অগ্রগতি ঘটে। পুলিশের সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে নিহতের স্বামী সুনামগঞ্জ সদর থানার রাঙ্গারচর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ওমান ফেরত ফারুক আহমেদের নাম।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এয়ারপোর্ট থানার একটি আভিযানিক দল দোয়ারাবাজার থানাধীন রাঙ্গারচর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ফারুককে গ্রেপ্তার করে। আটকের পর প্রাথমিকভাবে ফারুক হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করলেও, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করলে সে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে।
আসামি ফারুকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ফারুক ওমানে অবস্থানকালে তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের পূর্বের বিয়ে গোপন করা, তার সাথে বিয়ের পর অন্য পুরুষের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল। পরবর্তীতে গত ১৩ অক্টোবর ফারুক স্ত্রীকে নিয়ে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারতের কথা বলে সিলেটে আসে। মাজার জিয়ারত শেষে বেড়ানোর কথা বলে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব দিকের নির্জন টিলায় নিয়ে যায়। সেখানে বিকেল আনুমানিক চারটার দিকে তার ফুফাতো ভাই আলামিনের সহায়তায় স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে গলা টিপে হত্যা করে।
এ ঘটনার ফারুক ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ভিকটিমের চাচা রিপন মিয়া এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা নং-১৭ তারিখ-১৭/১০/২৫খ্রিঃ ধারা ৩০২/৩৪।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার (১৮ অক্টোবর) ফারুককে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে উপস্থাপন করলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দি প্রদান শেষে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।





