সড়ক-ফুটপাত হকার মুক্তকরণ মিশন শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১০:৪৯ অপরাহ্ন
অ্যাকশনে জনমনে স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে নগরীর সড়ক ও ফুটপাত হকার মুক্ত করতে ত্রিমুখী মিশন শুরু হয়েছে। রোববার সকাল থেকে তৎপর হয়ে উঠে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন। ফলে হকার মুক্ত হয় নগরীর প্রধান সড়ক ও ফুটপাত। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ২৫০ র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত স্থানে হকাররা স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ায় যানজটমুক্ত ও স্বস্তিদায়ক এক ভিন্ন নগরী দেখতে পেয়েছেন নগরবাসী। উদ্যোগের প্রশংসা করে এর ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
রোববার দিনভর নগরীর জিন্দাবাজার, লামাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার ও তালতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও কোনো হকার নেই। সকাল থেকে সড়ক ও ফুটপাতগুলো ছিল মুক্ত। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য বিভিন্ন এলাকায় টহল দেন। সন্ধ্যায় সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী নগরীর বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার এলাকা পরিদর্শনে যান। এসময় তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার দিনভর নগরীর ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একযোগে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে অংশ নেন ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তবে তার আগেই হকাররা সড়ক ও ফুটপাত ছেড়ে চলে যান।
এর আগে শনিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল- রোববার থেকে নগরের সড়ক ও ফুটপাতে কোনো হকার বসতে দেওয়া হবে না। নির্দেশ অমান্য করলে নেওয়া হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা।
হকারদের পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত করা হয় লালদীঘির পাড় মাঠ। তবে রোববার সেখানে অল্প সংখ্যক হকারকে দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, সেই স্থানে ক্রেতা সমাগম না থাকায় ব্যবসা হচ্ছে না। এছাড়া মাঠে প্রবেশের রাস্তাও সরু হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
কয়েকজন হকার জানান, আমরা বিকল্প স্থান চাই। কিন্তু ব্যবসা না হলে শুধু স্থান পেলে কি চলবে। আগেও দুবার এখানে এসেছি। কিন্তু বিক্রি হয় না। ব্যবসা না করলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এরপরও আমরা আইন মেনে এখানে ব্যবসা করতে রাজী আছি। প্রশাসনের উচিত এখানে ক্রেতা আসতে উদ্ধুদ্ধ করা।
হকারমুক্ত নগর দেখে খুশি নগরবাসী ও ব্যবসায়ীরা। বন্দরবাজার মধুবন মার্কেটের ব্যবসায়ী সিরাজ বলেন, মার্কেটের সামনে সবসময় হকাররা বসে থাকতেন। ফলে আমাদের ক্রেতা টানতে কষ্ট হতো। রাস্তায় তীব্র যানজট থাকতো। আজ সব ফাঁকা দেখে স্বস্থি লাগছে।
তবে এই পরিস্থিতি স্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, প্রশাসনের কঠোর অবস্থান যদি অব্যাহত থাকে, তবেই পরিবর্তন সম্ভব।জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানান, লালদিঘির পাড় মাঠে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাইকে সেখানে চলে যেতে হবে। নগরের ব্যস্ত এলাকার ফুটপাতে হকার বসতে দেওয়া হবে না। কেউ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, হকার মুক্ত রাস্তা ও ফুটপাতে সিএনজি অটোরিক্সা-লেগুনা স্ট্যান্ড মেনে নেয়া হবেনা। সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিবৃতি:
নগরীর যানজট নিরসন ও সড়ক-ফুটপাত হকারমুক্ত করার লক্ষ্যে লালদীঘিরপাড়ে অস্থায়ী হকার শেড তৈরি করে দিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। ভ্রাম্যমাণ হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নির্মিত অস্থায়ী বাজারে কোনোরকম ভাড়া ছাড়াই ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে হকাররা এখানে আসতে শুরু করেছেন। রোববার অনেক হকারকে তাদের পসরা দিয়ে হকার শেডে বসতে দেখা গেছে।
সড়ক ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনার ফলে দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরীতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছিল। এর ফলে নগরবাসীর হাঁটাচলায়ও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছিল। এ সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন ভ্রাম্যমাণ হকারদের বসার জন্য লালদীঘিরপাড়ে হকার শেড তৈরি করে দিয়েছে। ভ্রাম্যমাণ হকাররা এখন রাস্তা-ফুটপাত ছেড়ে লালদীঘির পাড়ের নির্ধারিত স্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। এতে নগরীর সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত হবে। এতে যানজট কমার পাশাপাশি নগরবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে হাটাচলাও করতে পারবেন। বাড়বে নগরীর সৌন্দর্যও।
নগরভবনের ঠিক পেছনে লালদীঘির পাড় মাঠে নতুন দশটি গলিতে ইট, বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী শেড নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন রাস্তা ও ড্রেন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে টয়লেটও। বাজারে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ। কাঁচা বাজার, মাছ বাজার, কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসার জন্য সাইনবোর্ড টানিয়ে স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। সিসিকের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। হকারদের সচেতন করতে সিসিক ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিংসহ প্রচার কাজ চালানো হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, নগরী যানজটমুক্ত করতে এবং সিলেট নগরীর বাসিন্দাদের নির্বিঘচলাচলের স্বার্থে আমরা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসার জন্য লালদিঘির পাড়ে অস্থায়ী শেড তৈরি করে দিয়েছি। ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আশা করি এখন হকাররা নগরীর রাস্তা ও ফুটপাত ছেড়ে লালদিঘিরপাড়ে চলে যাবেন। আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো ভাড়াও নিচ্ছি না। কাউকে কোনো টাকা দিতে হবে না।





