অবশেষে অভিভাবক পাচ্ছে ‘বেওয়ারিশ হাসপাতাল’
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৯:১৬:২১ অপরাহ্ন
জেলা প্রশাসকের বিশেষ উদ্যোগ | মাস দুয়েকের মধ্যে চালুর আশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে অভিভাবক পাচ্ছে সিলেটের ‘বেওয়ারিশ হাসপাতাল’ খ্যাত নবনির্মিত জেলা হাসপাতাল। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিভিল সার্জন কেউ পরিচালনার দায়িত্ব না নেয়ায় নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও চালু হয়নি হাসপাতালটি। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সিলেট জেলা হাসপাতাল।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নাকি সিভিল সার্জন অফিস- কেউ দায়িত্ব না নেয়ায় সিলেটে হাসপাতালটির পরিচিতি পায় বেওয়ারিশ হাসপাতাল হিসেবে।
সম্প্রতি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম আশার বানী শুনিয়ে বলেন- জটিলতা কাটিয়ে মাস দুয়েকের মধ্যেই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে। এতে বিভাগের কোটি মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা কেন্দ্র ওসমানী হাসপাতালের রোগীর চাপও অনেকটা কমবে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের দায়িত্ব হস্তান্তরসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকৌশলীসহ গঠিত এই কমিটি বর্তমানে ভবন হস্তান্তর ও পরিচালনা-সংক্রান্ত কাজ করছে। শীঘ্রই এর একটা ফলাফল আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সিলেটের পরিবেশবাদী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আপত্তি উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আর্থিক সুবিধা বিবেচনায় শতবর্ষের পুরনো আবু সিনা ছাত্রাবাস ভেঙ্গে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবন নির্মাণে মেডিকেল স্থাপত্যশৈলী ব্যবহার না করে আবাসিক ভবনের আদলে তা নির্মাণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কাজ শেষ হলেও সিলেটের স্বাস্থ্যখাতের কোনো বিভাগই এটি হাসপাতাল রূপান্তরের দায়িত্ব নেয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ স্থাপনাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ৯৮ একর জমির ওপর হাসপাতালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব পায় পদ্মা অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। এর আগে আবু সিনা ছাত্রাবাস প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন উল্লেখ করে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন সিলেটের নাগরিক সমাজ। তবে কোন কিছুকেই পাত্তা না দিয়ে নির্মিত হয় হাসপাতালটি।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৫ তলা হাসপাতাল ভবনে আনুমানিক ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আটতলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখন পরিচ্ছন্নতাসহ আনুষাঙ্গিক সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। যে কাজগুলো মাসখানেকের ভেতরে শেষ করা সম্ভব। এগুলো শেষ হলেই পুরোপুরিভাবে ভবনের সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
গণপূর্ত জানায়, হাসপাতাল ভবনের বেজমেন্টে রয়েছে কারপার্কিং। প্রথম তলায় টিকিট কাউন্টার, ওয়েটিং রুম। দ্বিতীয় তলায় আউটডোর, রিপোর্ট ডেলিভারি ও কনসালট্যান্ট চেম্বার। তৃতীয় তলায় ডায়াগনস্টিক। চতুর্থ তলায় কার্ডিয়াক ও জেনারেল ওটি, আইসিসিইউ, সিসিইউ। পঞ্চম তলায় গাইনি বিভাগ, অপথালমোলজি, অর্থপেডিক্স ও ইএনটি বিভাগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় ওয়ার্ড ও কেবিন। এর মধ্যে আইসিইউ বেড ১৯টি, সিসিইউ বেড ৯টি এবং ৪০টি কেবিন রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট গণপূর্ত বিভাগের বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখন পরিচ্ছন্নতাসহ আনুষাঙ্গিক সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। যে কাজগুলো মাসখানেকের ভেতরে শেষ করা সম্ভব। এগুলো শেষ হলেই পুরোপুরিভাবে ভবনের সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন হস্তান্তর করে দেবে যে কোনো সময়। এখন সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে দিতে চাই। কিন্তু কেউ দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। তারা ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এই কমিটি হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেবে, আমরা সেভাবেই কাজ করবো।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ৮ সদস্যের একটি কমিটি দেওয়া হয়েছে। কমিটি তাদের কাজ করে যাচ্ছে। কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে নব নির্মিত হাসপালকেই সিলেট শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হতে পারে।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশী রোগী। চিকিৎসা দিতে চিকিসক ও স্টাফরা নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি হাসপাতালে এভাবে পড়ে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এই হাসপাতালটিকে চালু করার। কে পরিচালনা করবে এ নিয়ে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় মনিটরিং করছে এখানে জেলা প্রশাসন সমন্বয় করছে। আশা করছি দুই মাসের মধ্যেই হাসপাতালটি চালু করা সম্ভব। এতে সিলেটের মানুষের চিকিৎসা সেবায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।







