জাতীয় পরিসংখ্যান দিবসের আলোচনায় তথ্য : সিলেটে কমেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০:৩৬ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, কমেছে সিলেটেও। বর্তমানে সিলেট জেলায় বার্ষিক গড় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, ২০১১ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে শূণ্য দশমিক ৮৩ এবং ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। অর্থাৎ জনসখ্যা বৃদ্ধির হার পুরুষের তুলনায় নারীর কিছুটা বেশি। পল্লী ও শহর এলাকাভেদে এ হার যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার জাতীয় পর্যায়ে ১ দশমিক ২২ শতাংশ।
সোমবার সিলেটে বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস ও জাতীয় পরিসংখ্যান দিবসের আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশের ন্যায় সিলেটেও সোমবার দিবসটি উদযাপিত হয়। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য মানসম্মত পরিসংখ্যান’।
সভায় জানানো হয়, সিলেট বিভাগে মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ১০ লক্ষ ৩৪ হাজার ৮৬৩। এরমধ্যে সিলেট জেলায় জনসংখ্যা ৩৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৩০ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ২৬ লক্ষ ৭৫ হাজার ২১৬ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ২৩ লক্ষ ২১ হাজার ৯৮ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২০ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮৬৯ জন। আর দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লক্ষ। সিলেটে পুরুষ ও মহিলার অনুপাত ৯৮:১০০ অর্থাৎ মহিলার তুলনায় পুরুষ ২ জন কম।
সিলেট জেলার কত শতাংশ পরিবারে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় আসে তা-ও তুলে ধরা হয় সভায়। এরমধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রবাসী আয় আসে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারে, সিলেট সদরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, দক্ষিণ সুরমায় ৭ দশমিক ১ শতাংশ, বালাগঞ্জে ৪ শতাংশ, ওসমানীনগরে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, জকিগঞ্জ ৫ দশমিক শতাংশ, কানাইঘাট ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, বিশ^নাথ ৭ দশমিক ১ শতাংশ, কোম্পানীগঞ্জ ২ দশমিক ৮ শতাংশ, ফেঞ্চুগঞ্জ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, গোয়াইনঘাট ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, জৈন্তাপুর ৩ শতাংশ, বিয়ানীবাজারে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং গোলাপগঞ্জে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকালে জেলা জেলা প্রশাসন চত্ত¡র থেকে র্যালী বের হয়। এটি সিটি পয়েন্ট চত্ত¡র ঘুরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।র্যালী শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পদ্মাসন সিংহ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আজাদুর রহমান ও জেলা সমাজসেবা অফিসের উপপরিচালক আব্দুর রফিক। জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোতিায় জেলা পরিসংখ্যান অফিস এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
সভায় বক্তারা মানসম্মত পরিসংখ্যানের গুরুত্ব, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিসংখ্যানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, সঠিক ও মানসম্মত পরিসংখ্যান হউক সরকারের নীতি নির্ধারণ, বাজেট প্রণয়ন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ভিত্তি।
বক্তারা বলেন, কেবল স্বায়ত্তশাসনই যথেষ্ট নয়, পরিসংখ্যান ব্যুরোর নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, দক্ষতা ও সম্পদ থাকতে হবে। একটি একীভূত জাতীয় তথ্য কৌশল (ন্যাশনাল ডেটা স্ট্রাটেজি) গঠনের আহŸান জানান তারা, যা রিয়েল-টাইম ডিজিটাল সিস্টেমে পরিসংখ্যান ব্যুরোকে সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
দিবসটির উপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপপরিচালক কামাল উদ্দিন। তিনি জেলার জনমিতিক চিত্র, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচক, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কৃষি, দারিদ্র্য, শ্রমশক্তি, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, পরিবেশ, বিদ্যুৎ এবং আইসিটি ব্যবহারের সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন। প্রেজেন্টেশন এর পর দিবসটির উপর একটি ভিডিওচিত্র উপস্থাপিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সঠিক ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান একটি দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। তাই তথ্য সংগ্রহে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে এবং মানসম্মত পরিসংখ্যান গঠনে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সিলেট বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আজাদুর রহমান জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরো জরিপে কম্পিউটার-অ্যাসিস্টড পারসোনাল ইন্টারভিউজ (সিএপিআই) পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করেছে। ট্যাবের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে সব প্রধান জরিপকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনা হবে।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে দৈনিক জালালাবাদ এর যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আহবাব মোস্তফা খান বলেন, বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সরকারি পরিসংখ্যান তৈরির ধরন পাল্টে দিচ্ছে। অথচ এখনও রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রায় ৬০ শতাংশ তথ্য পুরনো কাগজভিত্তিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ করছে। এই ম্যানুয়াল ডেটা সংগ্রহের ওপর নির্ভরতা সংস্থাটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
সভায় জানানো হয়, মাঠ জরিপের ওপর নির্ভরতা কমাতে ও অন্যান্য সংস্থা থেকে পাওয়া প্রশাসনিক তথ্য আরও কার্যকরভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে একটি ‘বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্ম’ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সুব্রত রঞ্জন হাজরার সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মিন্টু সরকার, ইফতেখার রাব্বি চৌধুরী ও সুরঞ্জিত কর সুজন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয়, জেলা উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।





