হকারমুক্ত ফুটপাতে স্বস্তি
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৩২:১৭ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার: প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে সিলেট নগরীর সড়কে দৌরাত্ম কমেছে হকারদের। গত দুই দিনে বদলে গেছে সড়কের দৃশ্য। সড়ক ও ফুটপাতে এখন আর নেই হকারদের দাপট। তবে বন্দরবাজার হকার পয়েন্টসহ কিছু জায়গায় ভ্যানে ও রাস্তায় কিছু হকার দেখা গেছে। আবার অনেকটা খালি সড়কে সিএনজি অটোরিকশার একাধিক সারি থাকায় রাস্তা কিছুটা সংকুচিত দেখা গেছে। ফুটপাত-সড়কে হকার না থাকায় বদলেছে নগরীর চিরচেনা চিত্র। কমেছে সড়কে যানজট। ফুটপাতে বেড়েছে স্বাচ্ছন্দে হাঁটার দৃশ্য। ফলে স্বস্তি ফিরেছে নগরজীবনে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নগরকে হকারমুক্ত করতে নগরবাসীর সচেতনতা প্রয়োজন। নাগরিকরা সড়কে হকারদের কাছ থেকে কেনাকাটা না করলে বাধ্য হয়ে হকাররা লালদিঘীরপারে হকারদের নির্ধারিত মার্কেটে বসবে। নগরবাসীর উচিত, লালদিঘীরপারে হকারদের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা। তাহলে সড়ক ও ফুটপাতমুক্ত থাকবে। বাসযোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে নগরী। তারা বলছেন, সড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। কোনো হকার যদি বিধিনিষেধ অমান্য করে সড়কে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নগরবাসী প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে ম্বাগত জানিয়ে বলছেন, প্রশাসনের এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। ফুটপাত হকার মুক্ত করতে এই উদ্যোগ যেন টেকসই হয়, সেটা চায় নাগরিকরা। তাই নিয়মিত হকার বিরোধী অভিযান যেন অব্যাহত রাখা হয়।
তথ্য বলছে, সিলেট নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)। কিন্তু কোনো উদ্যোগই টেকসই হয়নি। তাই এবার যৌথভাবে মাঠে নেমেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক), সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। সরকারের তিন এই সংস্থার এবারের উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে নগরে।
জানা গেছে, সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক), সিলেট জেলা প্রশাসন ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) পূর্ব ঘোষিত ডেডলাইন অনুযায়ী গত রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে লালদিঘীরপার হকার মার্কেটে বসার কথা ভাসমান হকারদের। ইতোমধ্যে অনেক হকার সেখানে স্থানান্তরও হয়েছেন। তবে বেশিরভাগ হকার স্থানান্তর নানা হওয়ায় গত রোববার (১৯ অক্টোবর) অভিযানে নামে সিসিক, জেলা প্রশাসন ও এসএমপি। ফলে অভিযান দেখে সটকে পড়েন অনেক হকার। গতকাল সোমবারও বিকেলে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। এসময় কিছু হকার মালামাল নিয়ে গলির মধ্যে ঢুকে পড়েন। তবে বেশিরভাগ হকারই এখন রাস্তায় পণ্য নিয়ে বসছেন না। বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
সরেজমিন বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে দেখা গেছে, সড়ক ও ফুটপাতে হকার না থাকায় স্বাচ্ছন্দে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছেন পথচারীরা। বিকেল ৫টার দিকে সরকারি অগ্রগামি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ছুটির পর দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের অনেকে হকারমুক্ত ফুটপাত দিয়ে হেটে যাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাতে আগে প্রতিদিন বেলা ২টার পর থেকে হকাররা পসরা সাজিয়ে বসতেন। গত দুই দিন ছিল ব্যতিক্রম। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে হকারদের দেখা যায়নি। নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা জিন্দাবাজার, লামাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, পুলের মুখ, তালতলা, শেখঘাট পয়েন্ট এলাকায় দেখা গেছে হকারমুক্ত ফুটপাতের দৃশ্য। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সড়কে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম বলেন, গত দুই দিন হকাররা ফুটপাত বা রাজপথে বসেননি। তারা আমাদের নির্দেশনা মেনে চলেছেন, এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি, সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ তারা লালদিঘীরপারে অস্থায়ী হকার্স মার্কেট প্রস্তুত করেছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রশাসনও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ফুটপাত মুক্ত করার অভিযানে সহযোগিতা করেছে। নগরবাসীকে অনুরোধ করবো, তারা যেন লালদিঘীরপার হকার্স মার্কেট থেকেই কেনাকাটা করেন। এতে শহরের শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম বলেন, হকার উচ্ছেদের পর যেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা লেগুনা আবার রাজপথ ও ফুটপাত দখল না করে, তা নিশ্চিত করা হবে। অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ ও পার্কিং সমস্যা আমাদের নজরে আছে। হুট করে পরিবর্তন সম্ভব না হলেও ধীরে ধীরে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।
এর আগে গত শুক্রবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে নগরীর কোনো সড়ক বা ফুটপাতে হকার বসতে দেওয়া হবে না। এ নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে পুলিশ, নগর ভবন ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন। এছাড়া স¤প্রতি সিলেটের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে আন্দোলন শুরু হলে ফুটপাতের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।







