চালুর ২২ ঘন্টা পর ফের বন্ধ শাহজালাল সারকারখানা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬:৪০:৪৩ অপরাহ্ন
ফেঞ্চুগঞ্জ প্রতিনিধি :
৭ মাস বন্ধ থাকার পর চালু হওয়ার ২২ ঘন্টা পর ফের বন্ধ হয়ে গেছে শাহজালাল সারকারখানার উৎপাদন। জ¦ালানি সংকট ও যান্ত্রিক ত্রæটির কবলে পড়ে উৎপাদনে ধস নেমেছে আধুনিক ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানে।
শাহজালাল সারকারখানা নির্মাণের পর যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে। গত অর্থবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার টন, উৎপাদন হয় ১ লাখ ৯০ হাজার টন। চলতি অর্থবছর ৩ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় কিন্তু অর্থ বছরের সাড়ে ৩ অতিবাহিত হলেও এখনও বন্ধ রয়েছে সারকারখানার উৎপাদন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) শাহজালাল সারকারখানার গ্যাসের বরাদ্দ বাতিল করে। ফলে ১২ মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত টানা ৭ মাস বন্ধ থাকে সারকারখানা। সিলেটের একমাত্র ইউরিয়া সারকারখানা গ্যাসের কারণে বন্ধ রাখায় ফেঞ্চুগঞ্জসহ সিলেটবাসীর মনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সিলেট জেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাগণ শাহজালাল সারকারখানা বন্ধের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গ্যাস বরাদ্দের জোর দাবি জানান তারা। অন্যথায় সারকারখানা চালুর জন্য দলমত নির্বিশেষে রাজপথে আন্দোলনের হুমকিও প্রদান করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘জ¦ালানি সংকটে ৬ মাস ধরে বন্ধ শাহজালাল সারকারখানা’ শিরোনামে দৈনিক জালালাবাদে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্ট প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ঢাকা থেকে বিসিআইসির পরিচালক ছুটে আসেন ফেঞ্চুগঞ্জ। শাহজালাল সারকারখানা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর পহেলা অক্টোবর সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। শুরু হয় সারকারখানা চালুর প্রক্রিয়া। ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া সেকশনসহ সব মেশিন চালু হলে ১০ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায় উৎপাদনে যায় শাহজালাল সারকারখানা। কিন্তু ২২ ঘন্টা চলার পর যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দেয় অ্যামোনিয়া প্লান্টে। ফের বন্ধ হয়ে যায় সার উৎপাদন।
শাহজালাল সারকারখানার টেকনিক্যাল বিভাগ সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু হলে অ্যামোনিয়া প্লান্টের এক্সপান্ডার বিয়ারিংয়ে ভাইব্রেশনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ট্রিপ করে সংশ্লিষ্ট ইউনিট। অ্যামোনিয়া সেকশনের গুরুত্বপূর্ণ ওই ইউনিট ট্রিপ করার পর সারকারখানার অন্যান্য প্লান্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। অ্যামোনিয়া প্লান্টের ওই ভাইব্রেশন মেরামতে সপ্তাহখানেক সময় লাগে। মেরামত সম্পন্ন হলে গত ১৭ অক্টোবর সারকারখানা ফের স্টার্টআপে যায় বলে ওই সুত্রটি জানায়।
শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের জিএম (প্রশাসন) এটিএম বাকী জানান, যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দেয়ায় বন্ধ রয়েছে সব প্লান্ট। মেরামত কাজ সম্পন্ন হওয়ায় সারকারখানা চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজকালের মধ্যে উৎপাদন শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড বিগত আওয়ামীলীগ আমলের অন্যতম একটি মেগা প্রকল্প। সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে চীনের মেসার্স কমপ্লান্ট। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ আমলে এ প্রকল্পে দুর্নীতির মহোৎসব হয়েছে। এ সারকারখানার একজন হিসাবরক্ষক একাই ৫০ কোটি টাকা লুটে নেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রমাণ পাওয়ায় ওই হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলাও দায়ের করে। ২০১৫-২০১৬ সাল ছিল এ সারকারখানার উদ্বোধনী অর্থবছর। বর্তমানে ১১তম অর্থ বছর অতিক্রম করছে শাহজালাল সারকারখানা।
শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির টেকনিক্যাল সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট (টিএসডি) এর তথ্য মতে ২০১৫ সাল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত শাহজালাল সারকারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ টন এবং একই সময়ে অ্যামোনিয়া সার উৎপাদন হয় ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ টন। উৎপাদনোক্ষম এ সারকারখানায় জুলাই বিপ্লবের পর থেকে নানা অনিয়ম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে একটি সুত্র জানায়। শাহজালাল সারকারখানার জনৈক চাকুরিজীবি জানান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিসিআইসি নিয়ন্ত্রিত শাহজালাল সারকারখানায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের লোকজন এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালীরা গা ঢাকা দিলেও সারকারখানার যাবতীয় ব্যবসায় তাদের কর্তৃত্ব চলছে নির্বিঘেœ। তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানান ওই চাকুরিজীবি।







