সিরিজ লোডশেডিংয়ে নাকাল সিলেটবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৭:৪৯ অপরাহ্ন
চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ

স্টাফ রিপোর্টার : ক্রমশই অবনতির দিকে যাচ্ছে সিলেটের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি। চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা সিলেট। ফলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। অক্টোবরের শেষদিকে এসেও অস্বাভাবিক তাপমাত্রার কারণে গরমে নাজেহাল মানুষ। এরই মধ্যে সিরিজ লোডশেডিংয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। ব্যবসা বাণিজ্যে নেমেছে ধস। নগরজুড়ে দেখা দিয়েছে পানি সংকট।
নগরীতে ১ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুতের দেখা পেলেও গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। দিনে রাতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গড়ে ৬ ঘন্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা গ্রামের মানুষ। ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রামাঞ্চল জুড়ে হাসফাঁস অবস্থা। গ্রামীন জনপদে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকগণ কিছুটা বিদ্যুৎ সেবা পেলেও পিডিবি গ্রাহকদের পরিণতি করুণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘন্টায় ঘন্টায় সিরিজ লোডশেডিংয়ের কারণে জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ পানিও সাপ্লাই দিতে পারছেনা সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। দিনভর টানা ১ ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বড় বড় ফ্ল্যাটে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবারকে দোকান থেকে পানি কিনে গৃহস্থালির কাজ চালাতে হচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন বাসা-বাড়ীতে থাকা শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিগণ। ঘন্টার পর ঘন্টা জেনারেটর চালিয়ে ব্যবসা চালাতে গিয়ে লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের জন্য জনসাধারণ ফুঁসে উঠলেও কোন সুখবর দিতে পারেনি সিলেট বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। লোডশেডিংয়ের জন্য গ্যাস সংকট ও বড়পুকুরিয়া খয়লা খনির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকাকে দায়ী করছেন তারা। সহসা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা নেই বলেও আশঙ্কা সিলেটের বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের পক্ষ থেকে ৩৫% লোডশেডিংয়ের তথ্য জানালেও মাঠের চিত্র ভিন্ন। মঙ্গলবার সিলেট বিভাগে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১৩০ মেগাওয়াট। বিভাগে লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ৩৫%। সিলেট জেলায় ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ৯০ মেগাওয়াট। এখানেও লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ৩৫%।
তবে মঙ্গলবার দিনভর খোদ সিলেট নগরীতে টানা ১ ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ মিলেনি। গ্রামাঞ্চলে ২ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের পর ৩০ মিনিটের বেশী বিদ্যুৎ মিলেনি। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে গড়ে লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ৩৫%। জনসাধারণের প্রশ্ন- গড়ে ৩৫% লোডশেডিং দেখানো হলে অর্ধেক সময় কেন বিদ্যুৎ বঞ্চিত নগরবাসী। বাকী ১৫% বিদ্যুত গেল কোথায়?
এমন প্রশ্নের কাঙ্খিত জবাব দিতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী জারজিসুর রহমান রনি দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে সিলেটে সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। লোডশেডিংয়ের বিষয়টিও কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ হয়। লোডশেডিং পর বিদ্যুতের সরবরাহ যখন স্বাভাবিক হয় তখন বিদ্যুতের ব্যবহার বেশী হয়। তাই নির্ধারিত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। তাই লোডশেডিংয়ের পার্সেন্টিজ ৩৫ থাকলেও নির্দিষ্ট এলাকায় লোডশেডিং বেশী দেখা দেয়।
এদিকে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতি শুধু সিলেট নয়, সারাদেশেই বিরাজ করছে। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম থাকায় নগরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এটি কতদিন থাকবে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে জাতীয় গ্রিডে পর্যাপ্ত সরবরাহ পাওয়া গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ থাকলেও চালু ছিল ১ নম্বর ও ৩ নম্বর ইউনিট। এই দুই ইউনিট দিয়ে যা বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো সেটি জাতীয় গ্রিডে যোগ দেওয়া হতো। যান্ত্রিক ত্রুটি কারণে ৩ নম্বর ইউনিটটি গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) থেকে সোমবার (২০ অক্টোবর) পর্যন্ত পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গত রোববার দিবাগত রাতে সচল থাকা ১ নম্বর ইউনিটও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দেশব্যাপী লোডশেডিং বেড়েছে।







