জকিগঞ্জে কিশোরগ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৭:০৪:২৮ অপরাহ্ন

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি: জকিগঞ্জ উপজেলার স্কুল-কলেজের আশপাশে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সড়ক ও খোলা মাঠে তাদের উৎপাত ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, মাদক সেবন, টিকটক ভিডিও তৈরি, অনলাইন জুয়া এবং বেপরোয়া আচরণের মাধ্যমে এসব গ্যাং নিয়মিতভাবে স্কুল-কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাফছা মজুমদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল খালেদ মহিউদ্দিন আজাদ আজ রোববার সকাল ১১ টায় সময় সচেতন নাগরিক সমাজ, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও সংবাদকর্মীদের নিয়ে করণীয় নির্ধারণে বৈঠকে বসছেন।
জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে সংঘবদ্ধ কিশোরগ্যাং সদস্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে জটলা সৃষ্টি করে এবং ছাত্রীদের লক্ষ্য করে অশ্লীল-অশ্রাব্য মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গি করে। বিশেষ করে হাফছা মজুমদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীরা এই গ্যাংয়ের অব্যাহত নিপীড়নে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, ছাত্রীদের গোপনে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া, আপত্তিকর মন্তব্য করা এবং বেপরোয়া আচরণের মাধ্যমে ইতোমধ্যে এই চক্র পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অনন্যোপায় হয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এমন ভিডিও প্রকাশের পর জড়িতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে তৎপর হয়ে ওঠেছেন।
হাফছা মজুমদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ছাত্রী বলেন, আমাদের কারো প্রতি কোনো শত্রæতা নেই। আমরা চাই নির্বিঘেœ লেখাপড়া করতে। আমাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা হোক।
হাফছা মজুমদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল খালেদ মহিউদ্দিন আজাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কিশোরগ্যাংয়ের কিছু সদস্যের অনাকাক্সিক্ষত কার্যকলাপের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আশপাশের এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একা কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারে না। এজন্য সর্বস্তরের জনগণ, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা রাখা জরুরি। সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ যদি একসাথে এগিয়ে আসে, তাহলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই যেকোনো ধরনের অরাজকতা ও অনৈতিক কার্যকলাপ রোধ করা সম্ভব।
জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম মুন্না জানান, কিশোরগ্যাংয়ের বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অভিযোগটিকে আমলে নিয়ে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের হয়রানি রোধে থানা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে বলে জানান।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে আমরা সতর্ক পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছি। ইতোমধ্যে আমাদের সহকারী কমিশনার ভ‚মি, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবং হাফছা মজুমদার মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল কাজ শুরু করেছেন। আশাকরি দ্রæততম সময়ের মধ্যে এই অপতৎপরতা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবো।







