কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রায় পিছিয়ে ব্যাংকগুলো
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৮:২৪:০৭ অপরাহ্ন
জালালাবাদ ডেস্ক: চলতি অর্থবছরের শুরুতে কৃষিঋণ বিতরণের গতি কিছুটা বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে রয়েছে ব্যাংকগুলো। এবার প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা পুরো অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১২ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এ সময়ে সর্বোচ্চ কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে শস্য উপখাতে, যদিও তা আগের বছরের তুলনায় কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খাদ্য উৎপাদন, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমানে মোট শ্রমজীবীর ৪৫ শতাংশ সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত। শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কৃষির পরোক্ষ অবদান রয়েছে। তাই এ খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিবছর নীতিমালা জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য কৃষি ঋণ বিতরণে একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে ৩৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্কে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে হবে। এই ৫০ শতাংশের মধ্যে শস্য ও ফসল উপখাতে ৫৫ শতাংশ, প্রাণিসম্পদ উপখাতে ২০ শতাংশ, মৎস্য উপখাতে ১৫ শতাংশ বিতরণের কথা বলা হয়েছে। আগের নীতিমালায় শস্য ও ফসল উপখাতে ৬০ শতাংশ, প্রাণিসম্পদ উপখাতে ১৫ শতাংশ ও মৎস্য উপখাতে ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণের কথা বলা হয়েছিল। অর্থাৎ এবার প্রাণিসম্পদ উপখাতে ঋণের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আর কমানো হয়েছে শস্য ও ফসল উপখাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ৪ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৩ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিরতায় ওই দুই মাসে অপেক্ষাকৃত কম কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে কৃষি ঋণ বিতরণ হয় ২ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। আর আগস্টে বিতরণ হয়েছে ২ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত বছরের জুলাইতে কৃষি ঋণ বিতরণ হয় ১ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আগস্টে বিতরণ হয়েছিল ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এবার শস্য উপখাতে সর্বোচ্চ ৪৪ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। গত অর্থবছরের একই সময়ে শস্য উপখাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ৪৬ শতাংশ। এবার গবাদিপশু ও পোল্ট্রি উপখাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ২৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া এবার মৎস্য উপখাতে ১৫ শতাংশ, দারিদ্র্য বিমোচনে ৫ শতাংশ ও অন্যান্য খাতে ৭ শতাংশ ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো।
গত অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছিল ৩৭ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ দশমিক ২৩ শতাংশ ছিল। তার আগের অর্থবছরের ৩৫ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কৃষি ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা, যা ওই অর্থবছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১০৬ দশমিক ১৫ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগের বেশি ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো। গত অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণের শতভাগ লক্ষ্যমাত্র পূরণ না হওয়ার পেছনে জুলাই-আগস্টের অস্থিরতা ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুদের হার বৃদ্ধি ও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটকে দায়ী করেন ব্যাংকাররা।
এদিকে চলতি অর্থবছরের শুরুতে কৃষি ঋণ আদায়ও বেড়েছে। এ সময়ে কৃষি ঋণ আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের পুরো সময়ে কৃষি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরও জানা যায়, এবারের নীতিমালায় ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে যে কোনো পরিমাণের ঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত সিআইবি চার্জ মওকুফের কথা জানানো হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে চার্জ ডকুমেন্ট শিথিল করা হয়েছে।







