গ্যাসের সিস্টেম লসে বছরে ক্ষতি ৪ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৮:৩৫:৩৯ অপরাহ্ন

জালালাবাদ ডেস্ক : গত অর্থবছরে দেশে প্রায় এক হাজার ৭৯৬ মিলিয়ন ঘনমিটার (এমএমসিএম) গ্যাস অপচয় হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে গ্যাসের গড় বিক্রয়মূল্যের হিসেবে, এই অপচয়ের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৪ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। ২০২১ অর্থবছর থেকে সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই লসের হার বাড়ছেই।
বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে ‘সিস্টেম লস’ বলতে চুরি ও অবৈধ সংযোগ, পুরোনো পাইপলাইনে গ্যাস লিক হওয়া, রক্ষণাবেক্ষণের সময় ক্ষতি, মিটারিং ত্রæটি ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতায় গ্যাসের অপচয়কেই বোঝায়। শুধু ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সিস্টেম লস এত বিশাল পরিমাণের যে, তা দিয়ে প্রায় ২০টি নতুন গ্যাস ক‚প খনন করা যেত বা ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই থেকে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো সম্ভব হতো।
জানা গেছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সিস্টেম লস অনুমোদন করে। কিন্তু গত অর্থবছরে এটি দৈনিক গড় সরবরাহের প্রায় ৭ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হিসাব বহির্ভূত গ্যাসের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৫৯৭ মিলিয়ন ঘনমিটার। এর আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯৭৯ মিলিয়ন ঘনমিটার। প্রতি বছর দেশের জন্য এই ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সমান।
তথ্য মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস ভলিউমের দিক থেকে সর্বোচ্চ। গত অর্থ বছর এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশে। আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। পেট্রোবাংলার প্রাথমিক প্রতিবেদনে এমনটিই উঠে এসেছে। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে গ্যাস সরবরাহকারী তিতাস গত অর্থবছরে সিস্টেম লসে আনুমানিক তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতিতে পড়ে। গত অর্থবছরে তিতাস প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার অবৈধ গৃহস্থালি সংযোগ এবং ৫৭৬টি বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে দুই লাখ ৯১ হাজার ও ৬৩৮।
যদিও তিতাস ভলিউমের দিক থেকে সর্বোচ্চ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, তবে শতাংশের দিক থেকে তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। গত অর্থবছরে বাখরাবাদের সিস্টেম লসের পরিমাণ ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এই কোম্পানি কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও ল²ীপুরের ৩৫টি উপজেলায় গ্যাস সরবরাহ করে।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান মিলিতভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৯৬ হাজারের বেশি অবৈধ গৃহস্থালি সংযোগ ও ৫৪১টি অবৈধ শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এ ছাড়া সারা দেশে ১৯৭ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ হয়েছে। পেট্রোবাংলা নেটওয়ার্কে ২৫ হাজারের বেশি লিকেজ শনাক্ত ও মেরামত করেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি বিতরণকারীর আওতায় প্রায় ৪৩ লাখ গৃহস্থালি গ্যাস সংযোগ রয়েছে। নতুন আবাসিক সংযোগ ২০০৯ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে, কারণ এ ধরনের সরবরাহের লাভ শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগের তুলনায় কম।







