আলোচনার কেন্দ্রে ‘দলীয় প্রতীকে ভোট’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০:১৩ অপরাহ্ন
আপত্তি জানিয়ে বিএনপির চিঠি, ইতিবাচক ভাবছে জামায়াত | সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো চিন্তা নেই সরকার ও ইসির

জালালাবাদ রিপোর্ট : আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজের দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে বলে আইনের যে খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন, এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। মিশ্র প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর। বাংলাদেশে নির্বাচন সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ায় এই বিধান আনা হয়েছে।
বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য কমিশনকে গতকাল রোববার চিঠি দিয়েছে। তাদের দাবি, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে টার্গেট করেই এমন নিয়ম করা হয়েছে।
অন্যদিকে, অন্যতম বৃহৎ দল জামায়াতে ইসলামী এ নিয়ে কোন প্রতিক্রয়া দেখায়নি। তবে জামায়াত নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার পক্ষে বলেই মনে করা হচ্ছে।আবার বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বলছে- আরপিওতে প্রতীক সংক্রান্ত নতুন নিয়ম তারা সমর্থন করছেন, কারণ তারা মনে করছে এর মাধ্যমে জোটবদ্ধ হলেও দলগুলো স্বতন্ত্র পরিচয় নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।
তবে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, যেহেতু সরকারও তাদের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, সেহেতু আপাতত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো চিন্তা তাদের নেই।জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় প্রতীকের বিষয়টি না এলেও সরকার কর্তৃক গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকেই নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে।
ওই কমিশনের একজন সদস্য আব্দুল আলিম বলেছেন, ছোট দলগুলোকে নিয়ে একতরফা নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা কিংবা বড় দলগুলোকে ব্যবহার করে ছোট দলের সুবিধা নেওয়ার যে চর্চা, গত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে নতুন ব্যবস্থা তার অবসান ঘটাতে সহায়তা করবে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুমোদিত হয়েছে। ওই বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আরপিও সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, নতুন নির্বাচনী জোট হলে জোটের অংশ হলেও দলের যে প্রতীক, তা দিয়ে নির্বাচন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটে থেকে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলো। তবে জামায়াত ইসলামী সেই নির্বাচনে তাদের দলীয় দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো।
এতোদিন জোটবদ্ধ দলগুলো নিজেরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানাতো যে তারা জোটের প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। আবার জোট থেকেও প্রতীক নিয়ে একটি চিঠি কমিশনকে দেয়া হতো।ফলে জোটের প্রতীক নিয়ে যেমন নির্বাচনে অংশ নেওয়া যেতো, তেমনি জোটবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলো।
কিন্তু বৃহস্পতিবার আরপিও সংশোধনীসহ যে খসড়া অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে- জোটবদ্ধ হলেও নিজেদের দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে।
বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে এটি প্রত্যাখ্যান করে। সেদিনই দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি সংশোধনের জন্য শিগগিরই নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবেন তারা। কথামতো রোববার বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়। বৈঠক শেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো. ইসমাঈল জবিউল্লাহ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
এসময় তিনি জানান, আরপিও’র ২০ ধারায় যেই সংশোধনী এনেছে ইসি, তার সাথে একমত নয় বিএনপি। রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত ছাড়াই এই সংশোধন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুন্ন করেছে বলেও মনে করছে বিএনপি। জবিউল্লাহ বলেন, এক্ষেত্রে আগের নিয়ম ফেরত চায় বিএনপি। আরপিওর ২০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করতে আমরা ইসির পাশাপাশি আইন উপদেষ্টাকে জানাবো।
এদিকে, বিএনপি আপত্তি জানালেও আরপিও সংশোধনীতে জামায়াতে ইসলামীর আপত্তি নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। দলটির একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রতীক আছে; তারা সেই প্রতীকেই নির্বাচন করবে-এতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমে বলেন, আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আরপিও সংশোধনী নিয়ে আমাদের অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মিটিংয়ে জানানো হবে। তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে শিগগিরই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে দলটির নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, প্রতিটি দলের একটা নিজস্বতা আছে। দলীয় প্রতীক দলের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই নিবন্ধিত দলগুলোর নিজস্ব পরিচয়ে যাওয়াই উত্তম।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতাকে সমর্থন করেছে ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি)। দলটির নেতা আখতার হোসেন বলেন, আমরা সংশোধনীটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, একটা দলকে নিবন্ধিত করে প্রতীক দেওয়া হয়। নিজ প্রতীকে নির্বাচন না করলে নিবন্ধিত হওয়ার কোনো মানে হয় না।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরও মনে করেন যে দলের প্রতীকেই নির্বাচন হওয়া উচিত। এদিকে, এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আব্দুল রহমানেল মাছউদ বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে। এটি সরকারও গ্রহণ করেছে। তাই এখন আর ভিন্ন কোনো চিন্তা আমরা করছি না।






