সুযোগ পেলে দেশ থেকে দুর্নীতির ক্যানসার সমূলে উপড়ে ফেলবো : ডাঃ শফিকুর রহমান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ৯:২২:৫১ অপরাহ্ন

মিশিগান (যুক্তরাষ্ট্র) প্রতিনিধি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের পরও দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাদাঁবাজী বন্ধ হয়নি। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, মসজিদে ইমাম-মুয়াজ্জিন নিয়োগেও ঘুষ দিতে হয়। সব জায়গা পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জামায়াত দেশ ও জাতির সেবা করার সুযোগ পেলে এসব দুর্নীতির ক্যানসার সমূলে উপড়ে ফেলবো। দুর্নীতির জট কেটে দেব। আমরা জানি এ কাজটি খুব সহজ হবে না। কিন্তু বাধা যতই হিমালয়সম হোকÑআমরা তা করবোই ইনশাল্লাহ।
তিনি শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের মিশগানে হ্যামট্রামিক শহরের গেইটস অব কলম্বাস হলে অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান সংক্ষিপ্ত সফরে মিশিগানে পৌঁছলে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি অব মিশিগানের উদ্যোগে তাঁকে গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ডা. মোতাহের আহমদের সভাপতিত্বে ও সিলেট মহানগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ডা. খালেদুজ্জামান, যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতের মূখপাত্র ডা. নকিবুর রহমান, আল ফালাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল লতিফ আজম, অ্যাটর্নি রুহুল মোমেন শাকির, বাংলাদেশি আমেরিকান ফোরামের শাহেদুল ইসলাম। হাফেজ আব্দুল বাছিতের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও সাবেক ছাত্রনেতা সাদিকুর রহমানের অনুবাদের মধ্যে দিয়ে সূচীত অনুষ্ঠানে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন রেনেসাঁ কালচারাল গ্রæপের শিল্পীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি অব মিশিগানের উদ্যোগে আমীরে জামায়াতকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও গণসংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে তাঁকে মিশিগান প্রবাসী কুলাউড়াবাসীর পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।
নির্বাচনে দল জয়ী হলে পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা প্রথমেই ভঙ্গুর শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবো। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও টেকনোলজি নির্ভর আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। কেননা শিক্ষাই জাতির মেরুদÐ। আপনারা আর বেকারদের মিছিল দেখবেন না। তবে এজন্য সময় লাগবে। তবে ৫ বছর সময় পেলে এসব ঠিক করে গাড়ি উল্টো দিকে ছোটানো যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্ণ বৈষম্য নেই। এই অভিশাপ থেকে জাতি মুক্ত। আমরা হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলেমিশে বহুকাল ধরে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে আসছি। আমাদের দেশ একটি অহিংস দেশ, তবে পৃথিবীর সব জায়গার মতো মাঝেমধ্যে সামান্য ব্যতিক্রম যে হয় নাÑতা নয়। আমরা সেই ব্যতিক্রমটাও দেখতে চাই না।
ডাঃ শফিক বলেন, বিগত দিনে আমাদের দেশে অভিনব মাছ ব্যবসার প্রচলন শুরু হয়েছে। এই ব্যবসায় রাতারাতি ভাগ্য খুলে যায় অনেকের। দেখা গেল নির্বাচনী হলফনামায় এই ব্যবসা দেখিয়েছেন। আবার ৫ বছর পরে একই ব্যবসায় ১শ ২২ গুণ পর্যন্ত লাভ করেছেন, বলেছেন-সবই মাছের ব্যবসার উন্নতির ফল!
জামায়াত আমীর বলেন, বিগত সাড়ে পনেরো বছর আমাদের ওপর অভিনবভাবে জুলুম নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানো হয়েছে। বিচারের নামে চরম অবিচার করে জামায়াতে ইসলামীর ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের ১ হাজার সহকর্মীকে খুন করা হয়েছে। অসংখ্য ভাই-বোনকে গুম করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুণ্ঠন করেছে অথবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু আমরা না, আমাদের মতো আরো অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বহু মূল্যবান জীবন চলে গেছে। ৫ আগস্টের পর আমরাই প্রথম আওয়াজ তুললামÑধৈর্য ধরুন, সকলে শান্ত থাকুন। প্রিয় দেশকে শান্তি ও শৃঙ্খলার দিকে নিয়ে আসুন। প্রথমে আমরা আমাদের কর্মীদের বললামÑকোনো প্রকার প্রতিশোধ নেয়া যাবে না। জুলুম আমাদের ওপর যাই হোকÑআমরা বিচার চাইতে পারি, কিন্তু হিংসাত্মক কোনো কিছু করা যাবে না। দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহŸান জানালাম। আমাদের এই উদ্যোগের ফলে শুধু আমাদের কর্মীরাই শান্ত হননি, দেশবাসীও শান্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। অনেকে বহুকিছু আশঙ্কা করেছিলেন, অনেক কথা বলেছিলেন, দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলে ২ দিনে ৫ লাখ মানুষকে হত্যা করা হতে পারে! দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কিছুই হয়নি।
জামায়াত আমীর আওয়ামী লীগের নাম না নিয়ে বলেন, তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন খুনী হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ প্রমাণ করেছেন জনগণ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও খুনী নয়।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর জামায়াত সর্বপ্রথম জুলাই শহীদ পরিবারগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়। এই শহীদ পরিবারগুলো আমাদের কাছে আমানত। আমরা প্রত্যেকটি পরিবারে গিয়েছি, চেষ্টা করেছি তাদের সান্ত¡না দিতে, দুঃখের সামান্য অংশীদার হতে। আমরা বহু পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি। জামায়াতের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সমাজের বহু হৃদয়বান ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন। আমাদের বোঝাকে হালকা করে দিয়েছেন।
ডা. শফিক প্রবাসী মিশিগানবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইবো না। আপনারা যাকে খুশি ভোট দেবেন। জামায়াতের ৫ দফা অঙ্গীকার তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের ৪১টি এমন অঙ্গীকার রয়েছে। এই ছোট্ট পরিসরে সবগুলো তুলে ধরা সম্ভব না। তবে আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেলে আমরা দুর্নীতির মূল উৎপাটন করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় যাক বা না যাকÑআমাদের অঙ্গীকারের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
এদিকে জামায়াত আমীরের মিশিগান গমন উপলক্ষে পুরো কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। টানা কয়েকদিন বিরামহীনভাবে চলে প্রচারণা। সাবেক ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও জামায়াত নেতৃবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। অনুষ্ঠানে আড়াই থেকে ৩ হাজার প্রবাসী অংশ নেন।






