তিন ধাপে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০:১১ অপরাহ্ন
প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা ♦ সংসদ ২৭০ দিনে ব্যর্থ হলে সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে

জালালাবাদ রিপোর্ট: সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন ধাপে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন।
সুপারিশে বলা হয়েছে, আগামী সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রথম ২৭০ দিন (৯ মাস) সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো এই সময়ের মধ্যে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে। তবে যদি সংসদ তা করতে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও করেছে। তা হলো-সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো খসড়া বিল (সংবিধান সংশোধনী আইনের খসড়া) আকারে তৈরি করবে সরকার। বিলটি গণভোটে দেওয়া হবে। গণভোটে তা পাস হলে সংবিধান সংস্কার পরিষদ মূল ভাব ঠিক রেখে প্রস্তাবগুলো অনুমোদন করবে। আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে তা অনুমোদন না করলে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেয় ঐকমত্য কমিশন। এতে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ নিয়ে কথা বলেন আলী রীয়াজ।
সুপারিশে গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারকে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেধে দেয়নি ঐকমত্য কমিশন। সুপারিশে কমিশন বলেছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। প্যাকেজ আকারে একটি প্রশ্নে গণভোট হবে। সেখানে সনদ ও খসড়া বিল সমর্থন করা হচ্ছে কি না, তা জানতে চাওয়া হবে।
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে কী হবে-এমন প্রশ্ন করা হয়। জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, তাঁরা সরকারকে বলেছেন, এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন ৪৮ বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশে সংসদ নির্বাচনের ভোটের সংখ্যানুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষের সুপারিশ করেছে। উচ্চকক্ষের মেয়াদ হবে শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর। তবে কোনো কারণে নি¤œকক্ষ ভেঙে গেলে উচ্চকক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে।
এতে বলা হয়েছে, গণভোটে জনগণের সম্মতি এলে জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার ৪৫ দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।তবে উচ্চকক্ষ বিষয়ক সুপারিশে উচ্চকক্ষ গঠনের আগেই অর্থাৎ নির্বাচনের সময়েই সম্ভাব্য সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের কথা বলা হয়েছে।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, নির্বাচনের পর যে সংসদ কার্যকর হবে তারাই সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হবেন। এক্ষেত্রে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একাদিক্রমে সংসদ ও সংস্কার পরিষদের জন্য আলাদা শপথ নিবেন এবং অনুরূপ শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর দান করিবেন।
সুপারিশে বলা হয়েছে, এই সংস্কার পরিষদ নিজেই নিজস্ব বিধি বিধান ঠিক করবে এবং এই পরিষদের বৈঠকে সংসদের নির্বাচিত স্পিকারই সভাপতিত্ব করবেন। স্পিকারের অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার এবং তাদের উভয়ের অনুপস্থিতিতে প্যানেল সদস্যরা এই দায়িত্ব পালন করবেন।
কমিশনের সুপারিশ গ্রহনকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ করেছে, সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ অতীত থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আজ একটি মহান ঐতিহাসিক দিবস। যেটা শুরু হয়েছিল অভ্যুত্থান দিয়ে। তারপর জুলাই ঘোষণা, এরপর জুলাই সনদ। আজকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, এই জুলাই সনদের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, সেটা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া যদি সঠিকভাবে পালন করতে পারি, কাজ এগিয়ে নিতে পারি; তাহলে বাংলাদেশ অতীত থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।
সুপারিশ হস্তান্তরের সময় উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।







