ইসিতে জামায়াতের ১৮ সুপারিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ৯:১৭:২০ অপরাহ্ন
নভেম্বরেই গণভোট দিতে হবে ♦ দলীয় প্রতীকেই ভোট করতে হবে

জালালাবাদ রিপোর্ট : আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে ১৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সুপারিশে দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বর মাসে কমিশনকে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জামায়াতে ইসলামীর সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নেতৃত্ব দেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার।
জামায়াতের ১৮ সুপারিশ :
১. জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানের লক্ষ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পরেই আগামী নভেম্বরে গণভোটের আয়োজন করতে হবে।
২. উপদেষ্টা পরিষদে গৃহীত সর্বশেষ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ২০নং অনুচ্ছেদের সর্বশেষ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে তাদের নিজস্ব দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোন দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না। এ বিধান বহাল রাখতে হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বিধান অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচনব্যবস্থা সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনই সুপারিশ করেছে। ফলে এই বিধান কোন ক্রমেই পরিবর্তন করা যাবে না। সংশোধিত বিধানই বহাল রাখতে হবে।
৩. নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের প্রত্যেক স্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. নির্বাচনি কাজের জন্য নিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথা প্রিজাইডিং, পোলিং, আনসার, আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সকল ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ সামরিক বাহিনীর সদস্যকে নিয়োগ করতে হবে।
৬. সকল ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনি বুথে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৭. বিগত অবৈধ নির্বাচনগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল এমন সব প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের আগামী নির্বাচনে নির্বাচনি দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। শতভাগ লটারির ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসি) নিয়োগ দিতে হবে।
৮. রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসনের অফিসারদের সাথে সাথে সাধ্যমতো বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকেও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. সব ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্বে সামরিক বাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
১০. নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করে নির্বাচনি মাঠ সমতল করতে হবে।
১১. সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ ছাড়াও বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দলীয় লোকদের রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে তা সরকারের নিকট জমা দিতে হবে।
১২. নির্বাচনি এলাকাগুলোতে যারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে থাকে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
১৩. ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্রের নির্ধারিত এলাকার মধ্যেই শুধু নয় বরং এর বাইরেও নির্বাচনি এলাকার যেকোন স্থানে সন্ত্রাসী তৎপরতার খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তা দমন করতে হবে।
১৪. ছবিসহ ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবি পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাই স্পষ্ট ছবিসহ ভোটার তালিকা পোলিং এজেন্টগণকে যথাসময়ে সরবরাহ করতে হবে।
১৫. নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত পোলিং, প্রিজাইডিং অফিসার, আনসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাইকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোট প্রদানের সুযোগ দিতে হবে।
১৬. প্রবাসী ভোটারদের ভোট প্রদানের পদ্ধতি সহজ করার জন্য ভোটার আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট যেকোন একটির মাধ্যমে ভোট প্রদানের সুযোগ দিতে হবে। রেজিস্টার্ড প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে।
১৭. নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও নিরপেক্ষতা যাচাই করতে হবে।
১৮। ফ্যাসিস্ট আমলে নিজেদের সুবিধামতো ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে সেগুলো এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করতে হবে।
বৈঠকে আরও অংশ নেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির, নির্বাহী পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ সেলিম।







