সিলেটের ২৭ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ৭:৫৮:২০ অপরাহ্ন

জালাবাদ ডেস্ক: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত হিসেবে প্রকাশিত গেজেট যাচাই-বাছাইয়ে অসঙ্গতি পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন বিভাগের মোট ১২৮ জনের গেজেট বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে সিলেট বিভাগের রয়েছেন ২৭ জন।
জেলা কমিটির সুপারিশে জানা যায়, এদের মধ্যে অনেকেই আহত নন, আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন না, আবার কিছু ব্যক্তির নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল। এসব বিবেচনায় সংশ্লিষ্টদের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়।
বাতিল হওয়া ১২৮ জনের মধ্যে দ্বৈততার কারণে ২৩ জন ও আহত নয়/আন্দোলনে সম্পৃক্ত নয়-এমন ১০৫ জনের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে এ সংখ্যা ভুয়া ২৬ ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ভুয়া ৩৪ জন এবং ৪ জনের নামে দুবার গেজেট রয়েছে। খুলনায় ভুয়া ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুরে ২ জন ভুয়া, ঢাকায় ৭ জন ভুয়া ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহীতে ৯ জন ভুয়া ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট এবং বরিশাল বিভাগে ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।
সিলেট বিভাগে বাতিলকৃতদের মধ্যে মৌলভীবাজারের মো. আজমল আলী (২), নুর ইসলাম আহমেদ সুজন (১৫), মাহমুদুল হাসান (১৬), তামিম আহমদ (৪০), মিনহাজুর রহমান রিমন (৪১), দেলোয়ার আহমেদ সেলিম (৪৬), মো. রিয়াদ মাহমুদ রকি (৪৯), মো. আরিফুল ইসলাম (৫০), শেখ মো. মাহফুজুর রহমান মাহিন (৫১), জমির মিয়া (৫২), মো. রায়হান চৌধুরী (৫৪), মো. রুমান আহমেদ (৫৫), হুমায়ুন আহমদ (৫৬), তানবির মিয়া (৫৭), নবিবুর রহমান (৫৯), জিসাম হোসেন রাহী (৭৩), ইমাদ উদ্দিন আহমেদ (৮০), মো. আলী হোসেন (৮৯), তারেকুল ইসলাম তারেক (৯০), মো. সুমন (৯১), নাঈম আহমদ (৯০৬), সিলেটের ফখরুল হাসান (৩৫৬), সুনামগঞ্জের মো. রুহুল আমিন (৪৪৫), মোফাজ্জল হোসেন (৪৯১), মো. আফতাব উদ্দিন (৫৭১) ও আল-হেলাল মো. ইকবাল মাহমুদ (৫৮৫)।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে।
এরআগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।
সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের সরকার এককালীন অর্থ সহায়তা ছাড়াও মাসিক ভাতা দিচ্ছে।
সরকার দুই দফায় গণঅভ্যুত্থানে ৮৪৪ জন জুলাই শহীদের নামের গেজেট প্রকাশ করে। পরে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়। অতি গুরুতর আহতদের ক-শ্রেণি, গুরুতর আহতদের খ-শ্রেণি ও সাধারণ আহতদের গ-শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকার এরই মধ্যে ক-শ্রেণির ৬০২ জন, খ-শ্রেণির এক হাজার ১১৮ জন ও গ-শ্রেণিতে ১২ হাজার ৩৮ জন জুলাই যোদ্ধার গেজেট প্রকাশ করেছে।
এই সংক্রান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, ক-শ্রেণির আহতরা এককালীন ৫ লাখ টাকা পাচ্ছেন। এরই মধ্যে তাদের ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাকি ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এরা প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
খ-শ্রেণির আহতরা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন। গত অর্থবছরে তাদের এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ২ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে দেওয়া হবে। তারা মাসিক ১৫ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। গ-শ্রেণির আহতরা ইতোমধ্যে এককালীন এক লাখ টাকা পেয়েছেন। তারা প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।







