রাজনীতিতে গণভোটের উত্তাপ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৫:৪৯ অপরাহ্ন
জামায়াতসহ ৮ ইসলামী দলের নতুন কর্মসূচী

জালালাবাদ রিপোর্ট: রাজনীতিতে এখন গণভোটের উত্তাপ। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ জমার পর জোরালো হচ্ছে গণভোটের দাবি। নইলে রাজনীতির আকাশে মেঘ জমার আশঙ্কা করছে জামায়াতে ইসলামীসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আট ইসলামপন্থি দল। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে নভেম্বরেই গণভোট দেওয়াসহ পাঁচ দাবিতে নতুন কর্মসূচি দিয়েছে দলগুলো।
দলগুলো বলছে, গণভোটের তারিখ ঘোষণায় যত দেরি হবে, আগামী ফেব্রæয়ারির নির্বাচন ততই সংকটে পড়বে। ইসলামী দলগুলোর বাইরে এনসিপিও অভিন্ন কথা বলছে। তবে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করার বিষয়ে অনড়। অন্যদিকে, একমত্য কমিশন বলছে, গণভোটের সিদ্ধান্ত এখন সরকারের হাতে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল।
এসময় জানানো হয়, দাবি আদায়ে সমমনা দলগুলোর পক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এরপর ৩ নভেম্বর বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে বৃহত্তর কর্মসূচি।
এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে ওনারা সুনির্দিষ্ট করে কোনো কথা বলেননি। বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনে অথবা আগে যেকোনো সময় (গণভোট হতে পারে ); অর্থাৎ তারা ঝুলিয়ে রেখেছে। এইটা বলাতে একটা ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বল চলে গেছে সরকারের কোর্টে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের সব দলের পরিষ্কার বক্তব্য, ঐকমত্য কমিশন যদি সুনির্দিষ্ট করে জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণদাবি অনুযায়ী গণভোটের তারিখটা বলে দিতেন, তাহলে কিন্তু আর ঝামেলা পাকাতো না। এখন দু-একটা দল, যারা একই দিনে গণভোট আর জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছেন, এই কথায় তারাও কথা বলার সুযোগ পেলেন। আর আমরা যারা আগে থেকেই চাচ্ছি, তাদেরও কথা বলার সুযোগ থেকে গেল। মাঝখান দিয়ে ঐকমত্য কমিশন বেঁচে গেছে।
গোলাম পরওয়ারের ভাষ্য, আমরা আজ এই ৮টি দল পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সরকারের এখন দায়িত্ব পড়ে গেছে খুব দ্রæত গণভোটের তারিখ ঘোষণা করা। গণভোটের তারিখ যদি আগে ঘোষণা করা না হয়, আগে বলতে জাতীয় নির্বাচনের আগে, যত দেরি করা হবে, ততই কিন্তু মূল জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে নতুন সংকট দেখা দেবে।
দ্রæত গণভোটের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, তেমনি ঐকমত্য কমিশনেরও প্রধান। দুই প্রধান হিসেবে ওনার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, জাতিকে সংকটমুক্ত করা, সংশয়মুক্ত করা। রাজনীতির আকাশে যে মেঘ জমেছে, সেটাকে দূর করে একটা আলোর নিশানা উনিই দিতে পারেন।
আর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচন কোনো কারণে পিছিয়ে গেলেও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন যেন না পেছায়, সে জন্য আগে গণভোট করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ।
পাঁচ দাবির মধ্যে রয়েছে-
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের উপর আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। ফ্যাসিস্ট সরকারের’ সকল জুলুম নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কাযর্ক্রম নিষিদ্ধ করা।
এসময় অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিনিয়র নায়েবে আমীর ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুজিবুর রহমান হামিদী, জাগপা মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব নিজামুল হক নাঈম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বিএনপি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করার বিষয়ে অনড়। জামায়াতে ইসলামীসহ আট ইসলামী দল ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সুনির্দিষ্ট সময় না বললেও সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের আগে গণভোট-এটির সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। এ ব্যাপারে আর আলোচনা করার সুযোগ নেই।
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি গণভোট বানচাল করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। গণভোটের পর বাংলাদেশে নির্বাচন হবে।
উল্লেখ্য যে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মঙ্গলবার সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের আনুষ্ঠানিক সুপারিশ করে।
এসময় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে জনগণের উপর আস্থা রাখতে বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, গণভোটে জুলাই সনদ পাস না জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে ধরে নিতে হবে। লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে সংবিধান নিয়ে দুইবার গণভোট ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণ টেনে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, প্রথমবার চিলিতে একটা সংবিধান তৈরি করে দেওয়া হল গণভোটে, সেটা হারল। কেউ কেউ বললেন, এটা অনেক বেশি দক্ষিণপন্থি হয়ে উঠেছিল অথবা বামপন্থি হয়ে উঠেছিল। একেকজনকে একটা বলল।
তারপর আবার এটা সংশোধন-সংযোজন করা হয়, করে আবার গণভোটে দেওয়া হয়েছিল। আবারও ফেল করেছে। পাস না করলে তার মানে হচ্ছে যে, জনগণ তাহলে গ্রহণ করছেন না। এইজন্য আমি বলছি আবার, জনগণের উপর আস্থা রাখুন।






