একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বটে
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০:০৪ অপরাহ্ন

সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সংস্কার ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে মিডিয়ায়। ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা পাচ্ছে কমিশন’ শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় সরকারী গোয়েন্দা সংস্থা বা যে কোন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকলে তা তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে মানবাধিকার কমিশনকে। মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় ‘উপরের নির্দেশ’ বলে অপরাধ থেকে দায়মুক্তি পাবেন না সরকারী কর্মকর্তা ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কোন সদস্য। এমনকি কোন কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি ছাড়াই গোপন আয়নাঘর (আটককেন্দ্র) বা যে কোন আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারবেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এসব বিধান রেখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রস্তাবিত খসড়াটি অনুমোদনের জন্য আগামী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, নতুন খসড়া অধ্যাদেশটি বিদ্যমান ২০০৯ সালের আইন প্রতিস্থাপন করবে। কমিশন হবে একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা। এটা সরকারের কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীন হবে না। লিখিত অভিযোগ ছাড়াও গণমাধ্যমে প্রচারিত বা প্রকাশিত প্রতিবেদন বা যে কোন মাধ্যমে মানবাধিকার লংঘন সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন ঘটনা তদন্ত করতে পারবে। কোন সরকারী কর্মকচারী বা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালে কমিশন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে কোন আইনানুগ অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে বা নির্দেশ দিতে পারবে।
লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০০৭ সালে গঠিত হয় এবং ২০০৯ সালে ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯’ দ্বারা পুনর্গঠিত হয়। এটি মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচারের জন্য একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তত্ত¡াবধায়ক সরকার এটি প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তী সময়ে মূল অধ্যাদেশ বিলুপ্ত করে ২০০৯ সালের ‘জাতীয় মানবাধিকার আইন ২০০৯’ প্রণীত হয় ও সুরক্ষার জন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠিত হয়। এর কার্যাবলী হচ্ছে, মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা তদœত করা, সুপারিশের মাধ্যমে সচেতনতা ও সংস্কারে কাজ করা এবং সকলের মানবাধিকার রক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।
বলা বাহুল্য, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনামলে এই বিধিবদ্ধ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটি একটি নখদন্তহীন সংস্থা তথা সরকারের ক্রীড়নক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের নাকের ডগায় চলতে থাকে খুন, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই সংস্থাকে সংস্কার ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থেই একটি নিরপেক্ষ শক্তিশালী সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সংস্কার ও পুনর্গঠন জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। আমরা এই নতুন খসড়া অধ্যাদেশকে স্বাগত জানাচ্ছি ও এর আশু বাস্তবায়ন কামনা করি।




